খাদের কিনার থেকে যেভাবে শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাল সিটি ব্যাংক
১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করা বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক নব্বইয়ের দশকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। সেখান থেকে ব্যাংকটিকে টেনে তুলতে ২০০৭ সালে নেতৃত্ব নেয় শুরুর উদ্যোক্তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি। একসময় ৪০ শতাংশ খেলাপি ঋণ এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩ শতাংশে। এখনকার সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলোর উদ্ধারের জন্য সিটি ব্যাংক একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি খাতের প্রথম ব্যাংক হিসেবে ১৯৮৩ সালে অনুমোদন পায় দি সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির উদ্যোক্তা ছিলেন তখনকার ১২ তরুণ ব্যবসায়ী। শুরুতে কিছুটা ভালো করলেও দশক পার না হতেই ব্যাংকটিতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ফলে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। খাদের কিনার থেকে ব্যাংকটিকে টেনে তুলতে ২০০৭ সালে প্রথম প্রজন্ম থেকে নেতৃত্ব নেয় দ্বিতীয় প্রজন্ম। এরপর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক ব্যাংকিংয়ের উত্তম চর্চা অনুসরণ, লোগো পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন করে ব্র্যান্ডিং ও সেবার মান বাড়ানো হয় ব্যাংকটির। এই সময়ে অ্যামেক্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কার্ড ও খুচরা ব্যাংকিং ব্যবসারও প্রসার ঘটায় ব্যাংকটি।
কয়েক বছর আগে একসময়ের সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকটির মালিকানায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। বিকাশের সঙ্গে মিলে ব্যাংকটি চালু করেছে ডিজিটাল অতিক্ষুদ্র ঋণ। সব মিলিয়ে নব্বইয়ের দশকের দুর্বল সিটি ব্যাংক এখন দেশের শক্তিশালী ব্যাংকের একটি।
ব্যাংকটির একসময়ের ৪০ শতাংশ খেলাপি ঋণ নেমে এসেছে ৩ শতাংশে। গত বছর ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। আগামী দিনে ডিজিটাল ব্যাংক হয়ে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ব্যাংক সমস্যায় পড়েছে তাদের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর একটি মডেল হিসেবে সামনে রয়েছে সিটি ব্যাংক।
সিটি ব্যাংককে এই পর্যায়ে আনতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন শুরুর উদ্যোক্তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি ও ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার। ২০০৭ সালের জুনে তিনি প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার আগের প্রজন্মের সময় ব্যবসা নয়, মানুষ দেখে ঋণ দেওয়া হতো। ফলে অনেক ঋণ খারাপ হয়ে পড়ে। ব্যাংকটি সমস্যাগ্রস্ত তালিকায় পড়ে যায়। সেখান থেকে ব্যাংকটিকে সঠিক পথে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দিতে একরকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি দায়িত্ব নিই। বিদেশি ব্যাংকে কাজের অভিজ্ঞতা আছে, এমন কর্মকর্তাদের ব্যাংকে যুক্ত করি। কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না—এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। এই সময়ে ব্যবসা ও অপারেশনের কেন্দ্রীভূতকরণ, পূর্ণাঙ্গ অনলাইন ব্যাংকিং, আমেরিকান এক্সপ্রেসের কার্ড ও খুচরা ব্যবসা চালুসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে সিটি ব্যাংক এখন দেশের শক্তিশালী ব্যাংক।’
যেভাবে যাত্রা ও রূপান্তর
সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও আনোয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার হোসেন বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিয়ে তাঁর আমার আট দশক বইয়ে লিখেছেন, ১৯৭৮ সালের শেষ দিকে ৪০ জন ব্যবসায়ী নেতার একটি প্রতিনিধিদল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেসরকারি ব্যাংক চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সাত্তারের তত্ত্বাবধানে বেসরকারি ব্যাংক–সংক্রান্ত আইন করা হয়। আর ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয় ১৯৮২ সালে।
আমার আগের প্রজন্মের সময় ব্যবসা নয়, মানুষ দেখে ঋণ দেওয়া হতো। ফলে অনেক ঋণ খারাপ হয়ে পড়ে। ব্যাংকটি সমস্যাগ্রস্ত তালিকায় পড়ে যায়। সেখান থেকে ব্যাংকটিকে সঠিক পথে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দিতে একরকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি দায়িত্ব নিই
ব্যাংকটির শুরুর উদ্যোক্তা ছিলেন ১২ জন তরুণ ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আনোয়ার গ্রুপ, ফিনিক্স গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, আজিজ গ্রুপ, হোসাইন গ্রুপ ও নূরানী অ্যাগ্রোর উদ্যোক্তারা। ব্যাংকটির প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ফিনিক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন, এম এ হাশেম, ইব্রাহিম মিয়া, আবুল বারিক চৌধুরী ও দীন মোহাম্মদ। ১৯৯৩-৯৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি ছিল লোকসানি ব্যাংক। পরিস্থিতি এতই খারাপ হয়ে পড়ে যে নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধনেও ঘাটতি দেখা দেয়। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এটিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে উদ্যোক্তারা কোনোভাবেই ব্যাংকটিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে বের করে আনতে পারছিলেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ব্যাংকটির সব ধরনের কেনাকাটা, ঋণ প্রদানসহ সব ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। সরকারি-বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের এনে ব্যাংকের কিছুটা উন্নতি হলেও পুরো সংকট থেকে বের হতে পারেনি। ২০০৫ সালের নভেম্বরে সমস্যাগ্রস্ত তালিকা থেকে বের হলেও ‘আর্লি ওয়ার্নিং’ তালিকায় ছিল ব্যাংকটি। ২০০৭ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন আজিজ আল কায়সার। তিনি দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অভিজ্ঞদের ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড় করানোর দায়িত্ব দেন। তাঁদের নানা উদ্যোগের ফলে ব্যাংকটি সংকট কাটিয়ে শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘সিটি ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকা থেকে বের হলেও আমার অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক বহাল রাখে। আমি চেয়েছিলাম ব্যাংকটি উন্নতি করতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় তদারকি থাকুক। এতে অন্যরা সতর্ক থাকবে। যার সুফল আমরা পেয়েছি।’
গেম চেঞ্জার
সিটি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার আগে থেকে পরিচালনা পর্ষদে থাকলেও ২০০৭ সালের জুনে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পরের মাসেই ইস্টার্ণ ব্যাংককে সফল রূপান্তরে নেতৃত্ব দেওয়া কাজী মাহমুদ সাত্তারকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির এমডি ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তখন যোগ দেন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আরও ৪ ব্যাংকার।
এর মধ্যে তখন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে যোগ দেন সোহেল আর কে হুসেইন, খুচরা ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন মাসরুর আরেফিন, ট্রেজারি বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ ও করপোরেট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন ইউসুফ সাঈদ। কাজী মাহমুদ সাত্তারের পর সোহেল আর কে হুসেইন ছয় বছর সিটি ব্যাংকের এমডি ছিলেন। বর্তমানে তিনি ব্যাংক এশিয়ার এমডি। মাসরুর আরেফিন ২০১৯ সাল থেকে সিটি ব্যাংকের এমডি ও শেখ মোহাম্মদ মারুফ গত বছর ঢাকা ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ইউসুফ সাঈদ সিটি ব্যাংকে যোগ দেওয়ার এক বছর পর কাতার ন্যাশনাল ব্যাংকে চলে যান। এখন তিনি কাতারের রিচমন্ড কনসালট্যান্ট অ্যান্ড সার্ভিসেসের কো-এমডি। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দেশি-বিদেশি ব্যাংকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তরুণ মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করে ব্যাংকটি।
কাজী মাহমুদ সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন সিটি ব্যাংকে যোগ দিই, তখন ব্যাংকটি সবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে বেরিয়ে এসেছে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭টি সূচকের উন্নতির শর্ত বেঁধে দেয়। আমার ছয় বছরে এসব সূচকের লক্ষ্য পূরণ করে অনেক ওপরে উঠে যায়। এসব অর্জনের প্রধান কারণ ছিল সুশাসন নিশ্চিত করে সঠিক পথে এগোনো। পেশাদারত্বের সঙ্গে ঋণ বিতরণ ও পরিচালনা করা। ওই সময়ে ব্যাংকের লোগো পরিবর্তন করা হয়, অ্যামেক্সের সঙ্গে যুক্ত হয় সিটি ব্যাংক। কার্ড, ভোক্তা ঋণ—সব মিলিয়ে ব্যাংকটি আমার সময়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায়। পরবর্তী নেতৃত্ব ব্যাংকটিকে আরও শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।’
ব্যাংককে বদলাতে হলে কর্মকর্তাদেরও বদলাতে হবে, সেটা সিটি ব্যাংক করতে পেরেছে। এর ফলেই সিটি এখন দেশের শক্তিশালী ব্যাংকের একটি। এখন যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাদের কয়েকটি একই কৌশলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে
কাজী মাহমুদ সাত্তার আরও বলেন, ‘ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সারের ইচ্ছা ছিল ব্যাংকটির উন্নতি করবেন। তিনি কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না, এমন প্রতিশ্রুতি দেন এবং তা রক্ষা করেন। ব্যাংককে বদলাতে হলে কর্মকর্তাদেরও বদলাতে হবে, সেটা সিটি ব্যাংক করতে পেরেছে। এর ফলেই সিটি এখন দেশের শক্তিশালী ব্যাংকের একটি। এখন যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাদের কয়েকটি একই কৌশলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।’
যেসব উদ্যোগে সিটি ব্যাংক শীর্ষে
২০০৮ সালে লোগো পরিবর্তন করে নতুন বার্তা নিয়ে গ্রাহকদের সামনে হাজির হয় সিটি ব্যাংক। ২০০৯ সালে বিশ্বখ্যাত আমেরিকান এক্সপ্রেসের (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড চালু করে ব্যাংকটি। একই বছর সব শাখা অনলাইনের আওতায় আনা হয়। ব্যাংকটির লোগোর পাশে যুক্ত হয় অ্যামেক্সের লোগো, যা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে ভিন্নমাত্রা যুক্ত করে। একই বছর সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস ও পরের বছর সিটি ব্রোকারেজ চালু হয়। ২০১০ সালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাউঞ্জ সেবা চালু করে সিটি ব্যাংক, যা ছিল বেসরকারি খাতের প্রথম লাউঞ্জ সুবিধা। পরে আরও দুটি লাউঞ্জ চালু করে ব্যাংকটি। এর ফলে ব্যাংকটির কার্ড ব্যবসা নতুন মাত্রা পায়। ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ায় সিবিএল মানি ট্রান্সফার ও ২০১৯ সালে সিটি হংকং চালু হয়। ২০১৩ সালে ব্যাংকটি ঘরে বসে লেনদেনের জন্য সিটিটাচ অ্যাপ চালু করে, ২০১৭ সালে যার নতুন সংস্করণ চালু হয়। ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ৫ শতাংশ শেয়ার কিনে সিটি ব্যাংকের অংশীদার ও পর্ষদে যুক্ত হয়। ২০২১ সালে বিকাশের গ্রাহকদের জন্য অতিক্ষুদ্র ঋণ চালু করে, যা দেশের প্রথম ডিজিটাল ঋণ। এই সেবায় দিনে ২০ হাজার গ্রাহক ঋণ নিচ্ছে, গড়ে যার পরিমাণ ৪ হাজার টাকা। সামনে প্রতিদিন বিকাশের ১ লাখ গ্রাহককে গড়ে ১০ হাজার টাকা ঋণ দিতে চায় ব্যাংকটি। এ ছাড়া সিটিজেম প্রায়োরিটি ব্যাংকিং সেবা ও সিটি আলো নারী ব্যাংকিংসহ ব্যাংকটির নানা উদ্যোগ ব্যাংকটির অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এসব সুবিধার ফলে ব্যাংকটির গ্রাহক গত বছর বেড়ে হয়েছে ৩২ লাখ, ২০০৭ সালে গ্রাহক ছিল ৬৮ হাজার। ব্যাংকটির কর্মকর্তার সংখ্যা এখন ৫ হাজার ৩২১ জন। দেশের সবচেয়ে বেশি ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক ব্যাংকটির। এতে ঋণ রয়েছে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা। গত বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত বেড়ে হয়েছে ৫১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা ও ঋণ ছিল ৪৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল থেকে আমানত বেড়েছে ১৫০ শতাংশ, ঋণ বেড়েছে ৯২ শতাংশ ও পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ২৪৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে ব্যাংকটির তহবিল খরচ ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, এখন যা কমে হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে ১০০ টাকা আয় করতে ব্যাংকটি ৫৮ টাকা খরচ করত, এখন যা কমে হয়েছে ৪২ টাকা।
সঠিক নির্দেশনা ও কাঠামো, সঠিক সেবা এবং অসংখ্য দর্শনের ফলে সিটি ব্যাংক আজ শক্তিশালী পর্যায়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকও পরীক্ষামূলক হিসেবে সিটি ব্যাংককে নিয়েছিল, যা সফল হয়েছে। ভবিষ্যতে সিটি ব্যাংক আরও প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে চায়। এ জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে আরও বেশি ঝুঁকবে
সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ব্যাংক খাতে প্রথম সফল রূপান্তরের ঘটনা ঘটে সিটি ব্যাংকে। কেন্দ্রীভূত ব্যাংকিং ও খুচরা ঋণ চালু করে ভালো সাফল্য পেয়েছি আমরা। ২০১২ সালে পথচলার জন্য নতুন লক্ষ্য-উদেশ্য ও ৫টি মূল্যবোধ নির্ধারণ করি। এতে মানুষের মধ্যে নতুন আগ্রহ তৈরি হয়। সঠিক নির্দেশনা ও কাঠামো, সঠিক সেবা এবং অসংখ্য দর্শনের ফলে সিটি ব্যাংক আজ শক্তিশালী পর্যায়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকও পরীক্ষামূলক হিসেবে সিটি ব্যাংককে নিয়েছিল, যা সফল হয়েছে। ভবিষ্যতে সিটি ব্যাংক আরও প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে চায়। এ জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে আরও বেশি ঝুঁকবে সিটি ব্যাংক।’
মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘সিটি ব্যাংকের রূপান্তর এখনো শেষ হয়নি। একসময় ৭২ শতাংশ আয় করপোরেট ব্যাংকিং থেকে আসত, এখন তা কমে ৪২ শতাংশ হয়েছে। আমরা ছোট ও মাঝারি, কার্ড, ডিজিটাল ঋণসহ অন্য ব্যবসা থেকে বেশি আয় করছি। ছোট ব্যবসার দিকে আরও বেশি নজর দিচ্ছি। বড় ঋণের বড় ঝুঁকির বদলে আমরা ছোট ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষে। সিটিটাচ অ্যাপের কারণে এক বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা আমানত এসেছে। সামনে সিটিটাচ আরও বড় আকারে আসবে।’
সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো সম্পর্কে মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দেশে যেকোনো ব্যাংক সংকটে পড়তে পারে। কারণ, ব্যাংকিং খাত এখনো বড় ঋণনির্ভর। ব্যাংকগুলোর মূলধন অনেক কম। আমরা যেভাবে বের হয়েছি, সেভাবেই সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে বের হয়ে আসতে হবে। এ জন্য সঠিক নির্দেশনা ও পথনকশা করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’