সঞ্চয়পত্র বেচবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক 

যেসব সেবা বন্ধ হচ্ছে

► সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা

► প্রাইজবন্ডের হাতবদল

► ছেঁড়াফাটা নোট বদল

► সরকারি চালানের টাকা জমা

► চালানের ভাংতি টাকা বিনিময়

বাংলাদেশ ব্যাংকছবি: বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেসবুক থেকে

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড বিক্রিসহ পাঁচ ধরনের সেবা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বন্ধ হতে যাওয়া সেবার তালিকায় আরও রয়েছে ছেঁড়াফাটা নোট বদল, সরকারি চালানের টাকা জমা দেওয়া ও চালানসংক্রান্ত ভাংতি টাকা প্রদান। ৩০ নভেম্বরের পর মতিঝিল কার্যালয় থেকে আর এসব সেবা পাওয়া যাবে না। মতিঝিল কার্যালয় থেকে এসব সেবা বন্ধ হয়ে গেলে গ্রাহকদের এসব সেবা নিতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদার ও ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে মতিঝিল কার্যালয়ের এসব সেবা গোটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নিচেই সংস্থাটির মতিঝিল কার্যালয়। ১৯৮৫ সাল থেকে এই কার্যালয় থেকে এসব সেবা দিয়ে আসছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শাখা কার্যালয় থেকে এ ধরনের সব সেবা বন্ধ করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে একাধিক সভার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গতকাল এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এর মাধ্যমে সব ধরনের খুচরা সেবা বন্ধ করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেটি হলে তাতে সাধারণ মানুষকে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সেবার ইতি ঘটবে। তার বদলে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তদারকিতে বেশি মনোযোগী হবে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

আপাতত বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে পাঁচ ধরনের সেবা ১ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে।

  বন্ধ হচ্ছে যেসব সেবা

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়সহ বিভিন্ন শাখা কার্যালয় থেকে সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড কেনাবেচাসহ ১০ ধরনের সেবা দেওয়া হয়। সরকার ও বাংলাদেশের পক্ষে এসব সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে মতিঝিল কার্যালয়ের ২৮টি কাউন্টারের মাধ্যমে এসব সেবা দেওয়া হয়। জানা গেছে, মতিঝিল কার্যালয় আধুনিকায়ন, উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা–সংবলিত স্বয়ংক্রিয় ভল্ট স্থাপন এবং মূল ভবনের নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নতির জন্য সম্প্রতি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার আওতায় আপাতত পাঁচটি সেবা দেওয়া ১২টি কাউন্টার ৩০ নভেম্বরের পর বন্ধ হয়ে যাবে।

এ সিদ্ধান্তের ফলে আগামী ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে নগদ টাকায় সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড কেনাবেচা হবে না। সরকারের পক্ষে ট্রেজারি চালানও জমা নেওয়া হবে না। পাশাপাশি ভাংতি টাকা এবং ছেঁড়াফাটা নোট বদলের সেবাও বন্ধ হয়ে যাবে। তবে মতিঝিল কার্যালয়ের ১৬টি কাউন্টারে কিছু সেবা মিলবে। এগুলো হলো ধাতব মুদ্রা বিনিময়, স্মারক মুদ্রা বিক্রয়, অপ্রচলিত নোট বিরোধ নিষ্পত্তি, ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন প্রভৃতি। এসব সেবা ভবিষ্যতে কীভাবে বন্ধ করা যায়, তা–ও চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিভাগে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা থেকেও ধীরে ধীরে এসব সেবা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কেন এই সিদ্ধান্ত

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা–সংক্রান্ত কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো কেপিআই হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ ব্যাংক তার মধ্যে একটি। কেপিআই হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ নিরাপত্তা স্তরভুক্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নথিতে বলা হয়েছে, মতিঝিল কার্যালয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর গত ২২ জুন মতিঝিল কার্যালয় পরিদর্শনের সময় ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়নে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তার একটি দিকনির্দেশনা দেন। এরপর একাধিক সভা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়, জনসম্পৃক্ত ১০টি সেবার মধ্যে আপাতত ৫টি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ধীরে ধীরে এই কার্যালয়ের সব কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাহকদের কোনো ভোগান্তি হবে না। গ্রাহকেরা যাতে নির্বিঘ্নে এসব সেবা পান, এ জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।'