ব্যাংকে নারী কর্মীর হার তিন বছর ধরে আটকে আছে ১৬ শতাংশের ঘরে

নানা কারণে অনেক নারী ব্যাংকে চাকরি করতে আসেন না। আবার এ খাতে অনেকে ভালো ক্যারিয়ার শুরু করেও সংসার সামলাতে চাকরি ছাড়েন।

প্রতীকী ছবি

দেশের ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও তা মোট জনবলের বিপরীতে এখনো বেশ কম। তিন বছর ধরে তো এই খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা ১৬ শতাংশেই আটকে আছে। বাকিরা পুরুষ কর্মী। এদিকে ব্যাংকগুলোর বোর্ড তথা পরিচালনা পর্ষদে নারীর সংখ্যা কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ৩৪৬। এর বিপরীতে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৫০। অর্থাৎ ব্যাংক খাতে মোট কর্মীর মধ্যে এখন ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ নারী, যা ২০২২ সালের শেষে ছিল ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর ২০২১ সালের শেষে সংখ্যাটি ছিল ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সে হিসাবে গত তিন বছরে নারী কর্মীর সংখ্যা শতকরা হিসাবে খুব বেশি নড়চড় করেনি। তবে সংখ্যা বিবেচনায় মোট নারী কর্মীর সংখ্যা ২০২১ সালের ৩০ হাজার ১৪১ জন থেকে ২০২৩ সালের শেষে এসে ৩ হাজার ২০৫ জন বেড়েছে। 

অন্যদিকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) নারীদের নিয়োগ বেশ বাড়ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ৩৬তম, ৩৭তম ও ৩৮তম সাধারণ বিসিএসে নারীদের নিয়োগের গড় হার ছিল ২৬ শতাংশের মতো। পরের ৩৯তম ও ৪১তম বিশেষ বিসিএসে যা বেড়ে গড়ে ৪৮ শতাংশে উঠেছে। এই পাঁচ বিসিএসে মোট ৬ হাজার ৫৬৬ জন নারী নিয়োগ পেয়েছেন। একই সময়ে পুরুষ নিয়োগ পেয়েছেন ৯ হাজার ৮০৪ জন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, এখন ব্যাংক খাতের প্রারম্ভিক পর্যায়ে কাজ করছেন, এমন নারীর সংখ্যা ১৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। মধ্যবর্তী পর্যায়ে যা ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর ব্যাংকের উচ্চ স্তরে নারী কর্মীর অংশগ্রহণ ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ব্যাংকে তিন স্তরে নারী কর্মীর অংশগ্রহণে এই সংখ্যা গত তিন বছরে যৎসামান্য বেড়েছে।

এদিকে ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকের বোর্ড বা পর্ষদে নারীর অংশগ্রহণ খানিক কমে ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশে নেমেছে। ২০২২ সালের শেষে এই হার ছিল ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দেওয়া নারীর হার ২০২৩ সালে ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা ২০২২ সালের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়রা আজম প্রথম আলোকে বলেন, নানা সামাজিক বাস্তবতায় নারীদের ব্যাংকে অংশগ্রহণ এখনো কম। সংসারের নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গেলে এখনো নারীদেরই ক্যারিয়ার ছেড়ে দিতে হচ্ছে। আবার অনেক নারী ব্যাংকে ভালো ক্যারিয়ার শুরু করেও পরিবারের সঙ্গে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তাতে ব্যাংকে নারীদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তবতা। এই সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির পাশাপাশি কর্মপরিবেশ উন্নত করতে হবে।

এদিকে ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও নারী কর্মীর সংখ্যা বেশ কম। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট জনবলের ১৭ শতাংশ নারী। বাকি ৮৩ শতাংশই পুরুষ। এই খাতের প্রাথমিক, মধ্যবর্তী ও উচ্চ স্তরে ব্যাংকের মতোই নারী কর্মীর সংখ্যা কম। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ডেও নারীর অংশগ্রহণ ব্যাংকের আশপাশে রয়েছে। তবে চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হার বেশি। ২০২৩ সালের শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাওয়া, মানে চাকরি বদল করা নারীর হার দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, নারীরা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন, এ জন্য পর্যাপ্ত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে, যাতে একজন মাকে তাঁর বাচ্চার নিরাপত্তা নিয়ে না ভাবতে হয়। অনেক নারী কর্মজীবনে প্রবেশের পরে শুধু বাচ্চা লালন–পালনের চিন্তায় চাকরি ছেড়ে দেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।