আমানতকারীরা তাঁদের অর্থ তুলে নিতে পারেন, এমন আশঙ্কায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সংকটে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। এ অবস্থায় ব্যাংকটি তার নগদ অর্থ বাড়ানো ও খরচ কমানোর উপায় খুঁজতে কাজ করছে। পাশাপাশি মার্কিন সরকার ও ওয়াল স্ট্রিট নেতারাও ফার্স্ট রিপাবলিককে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
কিন্তু গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পুঁজি সংগ্রহের চেষ্টায় সফল হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। ফলে ব্যাংকটি তার আকার কমানো বা সরকারি সহায়তা পাওয়ার যে পরিকল্পনা করেছিল, তা–ও এখনো সফল হয়নি। এ কারণে ক্ষতি এড়াতে নতুন কী করা যায়, সে উপায় খুঁজছে ব্যাংকটি। খবর রয়টার্সের
নগদ অর্থ বাড়ানো ও খরচ কমাতে ব্যাংকের আকার সীমিত করা এবং ব্যবসার কিছু অংশ বিক্রি করতে চায় ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক।
পাশাপাশি অন্যান্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের থেকেও পুঁজি সংগ্রহ করতে চায় ব্যাংকটি। কিন্তু দেশটির প্রধান প্রধান ব্যাংক ও প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফার্স্ট রিপাবলিককে মূলধনের জোগান দিতে খুব একটা আগ্রহী হচ্ছে না।
পরপর দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর নজর রাখা শুরু করেছে। ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের বিষয়েও সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
কিন্তু প্রধান প্রধান ব্যাংক ও প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থাগুলো অনুমান করছে, পরিস্থিতি খুব খারাপ দেখেই সরকার সহায়তার কথা বলছে। ফলে এ অবস্থায় ব্যাংকটিতে পুঁজি বিনিয়োগ করলে লোকসান হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছে। মূলত এ কারণেই গতকাল পর্যন্ত কোনো পুঁজি সংগ্রহ করতে পারেনি ফার্স্ট রিপাবলিক।
কানাডার অন্টারিওতে ট্রিপল ডি ট্রেডিংয়ের এক ব্যবসায়ী ডেনিস ডিক বলেছেন, মানুষ শুধু ঘাবড়ে যায়। তাঁরা ভাবে যে সরকার যদি সেখানে (ব্যাংকে) পদক্ষেপ নেয়, তবে শেয়ারধারীদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুঁজি সংগ্রহ করতে পারলে তা ব্যাংকটিকে তার ঋণাত্মক মান মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে। ব্যাংকটির দায় ও সম্পদের ব্যবধান ৯৪০ কোটি থেকে ১ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলারের মধ্যে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তা ও ওয়াল স্ট্রিট নেতারা ফার্স্ট রিপাবলিককে সহায়তা করার জন্য কী করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছেন। যেমন সরকার ফার্স্ট রিপাবলিকের ব্যালান্স শীট নষ্ট করে এমন সম্পদ বের করতে ভূমিকা রাখতে পারে।
এভাবে আরও কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারি সমর্থন পাওয়া যায় তা অন্বেষণ করা হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যাংকটির ক্ষতির সম্ভাবনা কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। তবে নিজেদের ওয়েবসাইটে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে লেখা এক বার্তায় ব্যাংকটি বলেছে, তারা এখনো আমানত কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার মতো ভালো অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ ফার্স্ট রিপাবলিকের শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ কমেছে। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে ফার্স্ট রিপাবলিকের বাজারমূল্য ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। সেখান থেকে কমে বর্তমানে হয়েছে ৩০০ কোটি ডলার। গত দুই সপ্তাহে ব্যাংকটি শেয়ারের মূল্য হারিয়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। যদিও গত মঙ্গলবার শেষে দাম আবার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে।