ঢাকা-চট্টগ্রামের ১০ পশুর হাটে ‘ক্যাশলেস’ লেনদেন

গাবতলীর পশুর হাট।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ই-কমার্সের মাধ্যমে গরু কিনলে ক্যাশলেস বা নগদ টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ আছে। তবে সাধারণত সরাসরি হাট থেকে কোরবানির পশু নগদ টাকায় কিনতে হয়। এতে টাকার নিরাপত্তা নিয়ে অনেকে ভয়ে থাকেন। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১০টি পশুর হাটে ‘ক্যাশলেস’ বা নগদবিহীন লেনদেনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব হাটে নগদ টাকার পরিবর্তে কার্ডের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে পশু কেনা যাবে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ নামে কোরবানির পশুর এই ১০ হাটে একটি করে ডিজিটাল বুথ থাকবে। সেখানে এটিএম মেশিন থেকে টাকা ওঠানো যাবে। পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) যন্ত্র ও মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) মাধ্যমে ক্রেতারা পশু বিক্রির টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। এতে বাসা থেকে টাকা বহন করার ঝামেলা থেকে রেহাই পাবেন ক্রেতারা।

এসব হাটে সম্ভাব্য যেসব জেলা থেকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা আসতে পারেন, তাঁদের ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী হাটে আসার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে নিজের নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবেন। তাতে বাড়তি টাকা বহন করার ঝামেলা থাকবে না। বিক্রেতারা তাঁদের ব্যাংক হিসাব ও এমএফএসের মাধ্যমে পশু বিক্রির টাকা নিতে পারবেন। গরু বিক্রির টাকা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে নিলে উত্তোলনের জন্য ন্যূনতম মাশুল গুনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক
ছবি: সংগৃহীত

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, গত বছর ঢাকার ছয়টি পশুর হাটে এই উদ্যোগ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। এবার সেবাটির পরিধি বাড়ছে। ঢাকায় দুটি হাট বাড়ানো হচ্ছে। আর ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে নতুন করে দুই পশুর হাটে এবার ক্যাশলেস বা নগদ টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেন করা যাবে।

ঢাকার যেসব পশুর হাটে ক্যাশলেস লেনদেন থাকবে সেগুলো হচ্ছে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট, মোহাম্মদপুরের বছিলা পশুর হাট, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং-সংলগ্ন আফতাবনগর পশুর হাট, ভাটারা সাঈদ নগর পশুর হাট, উত্তরা দিয়াবাড়ি পশুর হাট, কাওলার শিয়ালডাঙ্গা পশুর হাট, ঢাকা পলিটেকনিকের খেলার মাঠ ও মিরপুর ৬ নম্বরের ইস্টার্ন হাউজিং সংলগ্ন পশুর হাট। এ ছাড়া চট্টগ্রামের সাগরিকা ও নূরনগর হাউজিং-সংলগ্ন পশুর হাটে এবার ডিজিটাল লেনদেন বুথ বসানো হবে।

‘ক্যাশলেস’ লেনদেনের এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে ১০টি ব্যাংক। সেগুলো হলো এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ, নগদ, উপায়ের পাশাপাশি এম ক্যাশও থাকবে। নেটওয়ার্ক সেবা দেবে মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড (অ্যামেক্স) ও ভিসা কার্ড।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এবার ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এই সেবা চালু থাকবে। ঢাকায় সেবাটি চালু হবে ১৯ জুন আর চট্টগ্রামে ২০ জুন। গত বছর ঢাকার ৬ হাটে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ৩৩ কোটি টাকার ওপরে নগদবিহীন লেনদেন হয়েছিল। মোট লেনদেন হয়েছিল ১৩ হাজার ২১১টি। গতবারের সফলতার পরে এবার সেবার আওতা বাড়ানো হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো পরিকল্পনা আছে। এবার লেনদেন গতবারের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  

জানতে চাইলে মাস্টারকার্ডের এদেশীয় ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, সেবাটির মাধ্যমে পশুর হাটে নগদ টাকার লেনদেনের ঝুঁকি কমে আসবে ও জাল টাকার ব্যবহার রোধ সম্ভব হবে। গতবার পরীক্ষামূলক চালু করা হলেও ভালো সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। এবার নিশ্চিতভাবে লেনদেন বেশ বাড়বে। কারণ, এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সুবিধা হয়।