শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই রেটিং তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। কোন কোন সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই রেটিং করা হয়।
মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ: ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক টেকসই রেটিং ব্যবস্থা চালু করেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রমে পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসনের (ইএসজি) বিষয়গুলোকে যাতে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়, সে জন্য এই রেটিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। ২০২৪ সালের টেকসই রেটিংয়ে দেশের আরও ৯টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক শীর্ষ টেকসই ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত পাঁচটি সূচকের ভিত্তিতে ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এই রেটিংয়ের জন্য মূল্যায়ন করে। এগুলো হলো টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচক (৪৫%), টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক (৪০%), ব্যাংকিং সেবার পরিধি (১০%), সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে পুনঃ অর্থায়ন (৫%)।
টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচকে টায়ার-১ মূলধন, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত, নিরাপত্তা সঞ্চিতি পরিপালন বা সংরক্ষিত তহবিলের স্থিতি, সিএমএসএমই (ক্ষুদ্র, কুটির, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র) ও কৃষি খাতে বিনিয়োগের অংশ এবং বড় বিনিয়োগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মান ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয় এই রেটিংয়ের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক হিসেবে সবুজ বা পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের হার, টেকসই ও সবুজ অর্থায়নে বিনিয়োগগ্রহীতার সংখ্যা, ইএসডিডি রেটেড প্রকল্পের সংখ্যা, ইন–হাউস গ্রিন ব্যাংকিং প্র্যাকটিস ইত্যাদিও বিবেচ্য বিষয়। আর ব্যাংকিং সেবার বিস্তৃতি সূচকে মূল্যায়ন করা হয় ব্যাংকের শাখা-উপশাখার নেটওয়ার্ক, আমানত ও বিনিয়োগের হিসাব সংখ্যা এবং এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার পরিধি ইত্যাদি।
”গত বছর আমাদের ব্যাংক মোট বিনিয়োগের প্রায় ৯০ শতাংশই টেকসই অর্থায়নে বিতরণ করেছে, যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ শতাংশ।
এই রেটিংয়ে আপনাদের অবস্থান কী ছিল?
মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ: মূলত যেসব ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ভালো, মূলধন পর্যাপ্ত এবং সম্পদের মান ভালো, তারাই বেশি নম্বর পায়। তবে এই নম্বর গোপনীয়। আমাদের ব্যাংক উল্লিখিত পাঁচটি সূচকেই ভালো অবস্থানে ছিল। গত বছর আমাদের ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের প্রায় ৯০ শতাংশই টেকসই অর্থায়নে বিতরণ করেছে, যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ শতাংশ। পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ হিসেবে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্থ, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। দেশজুড়ে আমাদের ব্যাংকের ১৪১টি শাখা, ৫টি উপশাখা, ১২০টি এজেন্ট আউটলেট, ১৩৬টি এটিএম বুথ রয়েছে। এতে ব্যাংকিং সেবার বিস্তৃতি সূচকেও আমরা ভালো নম্বর পেয়েছি বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এ ছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও আমাদের অবস্থান ভালো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই টেকসই রেটিংয়ে স্থান করে নিতে আপনারা বাড়তি কী কী উদ্যোগ নিয়েছিলেন?
মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ: ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক স্কোপ ১, ২ ও ৩—এই তিন স্তরের কার্বন নিঃসরণের শতভাগ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে পার্টনারশিপ ফর কার্বন অ্যাকাউন্টিং ফিন্যান্সিয়াল (পিসিএফ) স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা হয়েছে। টেকসই কার্যক্রম নিশ্চিত করতে শাহ্জালাল ব্যাংক সব সময় এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (ইএসআরএম) পরিপালন করছে। একই সঙ্গে টেকসই অর্থায়নের জন্য পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসন (ইজিএস) কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করেছে। ব্যাংকের শাখা ও প্রধান কার্যালয়ে এসএমই ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষায়িত ডেস্ক চালু করা হয়েছে।
এই উদ্যোগগুলো ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে কতটা ভূমিকা রাখছে?
মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ: টেকসই সূচকে ধারাবাহিক ভালো অবস্থান মানে হলো ব্যাংকের ভিত মজবুত, দায়বদ্ধতা স্পষ্ট এবং জনভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত। তাই এই সূচকে এগিয়ে থাকা ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা যেমন বাড়বে, তেমনি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি একটি মানদণ্ড হয়ে দাঁড়াবে। টেকসই রেটিং শুধু একটি র্যাঙ্কিং নয়, এটি একটি বার্তা। ব্যাংকিং খাতকে আর শুধু মুনাফার বিচারে নয়; বরং সামাজিক ও পরিবেশগত দায়িত্ব পালনের দৃষ্টিকোণ থেকেও মূল্যায়ন করা জরুরি।