চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে মুনাফার শীর্ষে মধুমতি
রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের একটি মধুমতি ব্যাংক। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে শিল্পগোষ্ঠীর পাশাপাশি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক একাধিক সংসদ সদস্যও রয়েছেন। ব্যাংকের পর্ষদে রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতির কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি ব্যাংকটির আর্থিক নানা সূচকে। উল্টো গত ১২ বছরে বিভিন্ন আর্থিক সূচকে ব্যাংকটি ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে।
ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণ ব্যাংকটির। এমনকি চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে গত বছর শেষে সর্বোচ্চ মুনাফাও করেছে মধুমতি ব্যাংক। ফলে গত ১২ বছরে ব্যাংকটির আর্থিক ভিত্তি ও ব্যবস্থাপনা ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী এক ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে সম্প্রতি ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার এক যুগ পূর্তি উদ্যাপন করেছে।
ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় মধুমতি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। রাজনৈতিক কিছু ব্যক্তির পাশাপাশি শুরু থেকে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত হয় মেঘনা গ্রুপ, লাবিব গ্রুপ ও শারমিন গ্রুপ। তবে ব্যাংকটি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে পেশাদারি বজায় রাখে। জনবল নিয়োগ থেকে শুরু করে পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও ঋণের সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংকিং নিয়ম ও রীতি মেনে। ফলে ব্যাংকটিতে রাজনীতির কালো ছায়া পড়েনি। এ ছাড়া দেশের ভালো ব্যবসায়ী ও শিল্প গ্রুপকে গ্রাহক হিসেবে যুক্ত করে ব্যাংকটি।
শুরু থেকে সম্পূর্ণ পেশাদারির সঙ্গে মধুমতি ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে। পরিচালনা পর্ষদও এ ক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। ভালো গ্রাহকদের কারণে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি মজবুত হয়েছেসফিউল আজম,এমডি, মধুমতি ব্যাংক
ব্যাংকটির তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে ব্যাংকটির শীর্ষ গ্রাহক তালিকায় রয়েছে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, স্মার্ট টেকনোলজি, রিদিশা গ্রুপ, মীর আকতার গ্রুপ, ইউরো আর্ট অ্যাপারেলস, ওএমসি লিমিটেড, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, এডেক্স গ্রুপ, হেলথকেয়ার ফার্মা ও ইউনিমেড হেলথকেয়ার।
ব্যাংকটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১১ কোটি টাকা। আর গত বছর শেষে ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৬৩ কোটি টাকায়। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১৫৩ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। ব্যাংকটি গত বছরে ৪ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার আমদানি বাণিজ্য ও ৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা রপ্তানি বাণিজ্য করেছে। এ ছাড়া ব্যাংক গ্যারান্টি ব্যবসা করেছে ৩ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার।
ব্যাংকটির তহবিল খরচ ও আয়ের বিপরীতে খরচও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর তহবিল খরচ ছিল ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ ও ১০০ টাকার আয়ের বিপরীতে খরচ ছিল ৩৪ টাকা ৪৬ পয়সা। এ ছাড়া মূলধন পর্যাপ্ততার হারও সর্বোচ্চ, যা ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর ফলে কয়েক বছর ধরে টানা ব্যাংকটি এক শ কোটি টাকার বেশি নিট মুনাফা করছে। গত বছরে নিট মুনাফা করেছে ১২৬ কোটি টাকা।
এদিকে কার্যক্রম শুরুর ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি ব্যাংকটি। ইতিমধ্যে গত কয়েক বছরের জন্য শেয়ারধারীদের ব্যাংকটি ১৩৮ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। ফলে ২০১৩ সালে যারা ১০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছিল, তারা ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে। এখন ব্যাংকটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকটি যাত্রার পর ৮ ধাপে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার (এমটিও) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জনবল নিয়োগে পেশাদারত্ব বজায় রাখায় সেবার মানও ভালো। সারা দেশে ব্যাংকটির শাখা রয়েছে ৫২টি, চলতি বছরে যা ৬০টিতে উন্নীত করতে চায় ব্যাংকটি। সারা দেশে ব্যাংকটির এটিএম রয়েছে ৪৭টি ও এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ৬৪৩টি। ব্যাংকটির কর্মী সংখ্যা ৭৬০।
ব্যাংকটির তথ্য অনুযায়ী, মধুমতি ব্যাংকের আমানতের ৫৫ শতাংশ করপোরেট খাতের ও বাকি ৪৫ শতাংশ সাধারণ গ্রাহকদের। ব্যাংকটিতে আমানত হিসাব রয়েছে ৫ লাখ। ঋণের ৭৮ শতাংশ করপোরেট খাতে, বাকিটা খুচরা, এসএমই ও কৃষিঋণ।
জানতে চাইলে মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সফিউল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরু থেকে সম্পূর্ণ পেশাদারির সঙ্গে মধুমতি ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে। পরিচালনা পর্ষদও এ ক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। ভালো গ্রাহকদের কারণে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি মজবুত হয়েছে। সবার চেষ্টায় চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমরা ভালো অবস্থানে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনে ছোট ও মাঝারি ঋণে বাড়তি নজর দেওয়া হবে। এ ছাড়া বেছে বেছে করপোরেট খাতেও আমরা ঋণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।’