কোনো ব্যাংক এখন তারল্যসংকটে নেই

বেসরকারি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) তাদের কার্যক্রম শুরুর ২৭ বছর পূর্ণ করেছে। ১৯৯৫ সালে কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংকটি। ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যাংকটির বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সানাউল্লাহ সাকিব।

জাফর আলম

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: গত ২৭ বছরে ব্যাংকের কোন অর্জনকে আপনি অনন্য বলে মনে করেন?

জাফর আলম: দেশজুড়ে বর্তমানে আমাদের রয়েছে ১৭৯টি শাখা, ১৪৫টি উপশাখা, ৩০৮টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ও ১৯৬টি এটিএম বুথ। এ ছাড়া অনলাইনেও আমাদের ব্যাংকের সেবা মিলছে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে। আমরাই প্রথম ক্যাশ ওয়াক্ফ চালু করেছি। যার মাধ্যমে আয় থেকে দান করা যায়। এ ছাড়া হজ হিসাব, মোহরানা হিসাব, জাকাত হিসাবসহ নানা সেবা রয়েছে। নতুন করে শিক্ষা, বিবাহ ও চিকিৎসাসংক্রান্ত আমানত ও ঋণসেবা চালু করেছি। এতে ইতিমধ্যে ৫৭ হাজার হিসাব খোলা হয়েছে। গত ২৭ বছরে এসব সেবা ব্যাংকের বড় অর্জন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: মানুষ ব্যাংকে টাকা রেখে যা পাচ্ছে, মূল্যস্ফীতি তার চেয়ে বেশি। আবার ডলার–সংকটও চলছে। পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিচ্ছেন?

জাফর আলম: বিশ্বের অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি আমাদের দেশের চেয়ে বেশি। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমাদের খুব বেশি কিছু করার নেই। আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের একটু বেশি মুনাফা দিতে। আশা করছি, ঋণের ৯ শতাংশ সুদের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলমান ডলার–সংকটের কারণে আমরা ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট যাচাই–বাছাই করছি। এরই মধ্যে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বেড়েছে আমাদের। এতে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফাও বেড়েছে। অনলাইন সেবার প্ল্যাটফর্ম এসআইবিএল নাওয়ের মাধ্যমে ৩৪টি দেশ থেকে হিসাব খোলা যাচ্ছে। এতে প্রায় ছয় হাজার হিসাব খোলা হয়েছে। ফলে আমাদের সংকট কিছুটা কম।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: অনেক গ্রাহক ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না, ফলে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আপনাদের বেশ কিছু ঋণের বিষয়ে আপত্তি দিয়েছিল। সেগুলোর এখন কী অবস্থা।

জাফর আলম: ঋণ আদায়ে আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে খেলাপি ঋণ এখন কমে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের ওপর ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণের বিষয়ে আপত্তি দিয়েছিল, এর মধ্যে ১ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা নিয়মিত করা হয়েছে। আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ আদায় করতে পেরেছি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ডলারের পাশাপাশি ব্যাংক খাতে টাকার সংকটের বিষয়টি নিয়েও এখন আলোচনা হচ্ছে। আসলে কি এমন কিছু হয়েছে?

জাফর আলম: এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো শাখা থেকে অতিরিক্ত টাকার চাহিদা আসেনি। কোনো গ্রাহকের টাকা না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেনি। আগের চেয়ে বেশি টাকা উত্তোলনের কোনো ঘটনাও জানা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে বলেছে, দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত তারল্য আছে। এখন কোনো ব্যাংক তারল্য সংকটে নেই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সামনে আপনাদের ব্যাংকে নতুন কী সেবা যুক্ত হচ্ছে?

জাফর আলম: ইতিমধ্যে ব্যাংকে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন এনেছি। প্রান্তিক জনগণের কাছে ব্যাংকিং–সেবা পৌঁছে দিতে আমরা দেশব্যাপী সাতটি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করেছি। সেখানে আঞ্চলিক প্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৯টি শাখা উদ্বোধন করেছি। আগামী বছর আরও কিছু শাখা ও উপশাখা খোলা হবে। এজেন্ট ব্যাংকিং–সেবাও সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এখন হকার্স পুনর্বাসন, প্রবাসী আমানত ও অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য আমরা বিশেষ সেবা চালু করতে যাচ্ছি। এসব সেবায় হিসাব খুললে আমাদের হাসপাতালে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। প্রবাসী ব্যক্তিদের বিমানবন্দর থেকে যাতায়াত ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দেওয়া হবে।