প্রবাসী আয় বাড়লেও কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি কমেনি। অন্যদিকে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে ১৫ দিনে রিজার্ভ কমেছে ১২১ কোটি ডলার।
চলতি নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধে প্রবাসী আয়ে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময়ে এসেছিল ৯২ কোটি ডলার।
প্রবাসী আয় বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমছে।
বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের শুরুতে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১২৩-১২৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ফলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানো বেড়ে গেছে। এখন কড়াকড়ি আরোপ করায় আয় আসা আবার কমতে পারে।
এদিকে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। এই সুযোগে কিছু ব্যাংক আটকে রাখা আমদানি দায় ও বিদেশি ঋণের কিস্তি শোধ করে দিয়েছে। এরপরও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অবশ্য কমেনি। পাশাপাশি চলতি মাসে বাংলাদেশকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয়েছে। দুটো মিলিয়ে ১৫ দিনে রিজার্ভ কমেছে ১২১ কোটি ডলার।
বাড়ছে প্রবাসী আয়
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০৯ কোটি ডলার, যা এ বছরের একই মাসে কমে হয় ১৯৭ কোটি ডলার। গত বছরের আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০৩ কোটি ডলার। এবার একই মাসে তা কমে হয় ১৬০ কোটি ডলার। গত সেপ্টেম্বরে আয় আরও কমে ১৩৩ কোটি ডলারে নামে, যা গত বছর একই মাসে ছিল ১৫৪ কোটি ডলার। গত অক্টোবরে আবার আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৭ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ১৫২ কোটি ডলার। আর চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনে আয় আসে ১১৩ কোটি ডলার, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। এখন প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ে প্রতি ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। তবে প্রবাসী আয়ে সরকারের আড়াই শতাংশের পাশাপাশি ব্যাংক আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারে। ৫ শতাংশ প্রণোদনার ফলে প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম দাঁড়ায় প্রায় ১১৬ টাকা। তবে আমদানি দায়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১১১ টাকা।
ব্যাংকারদের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন এসব দাম তদারক করছে। পাশাপাশি প্রবাসী আয় সংগ্রহে শীর্ষ পর্যায়ে থাকা রেমিট্যান্স হাউসগুলোকেও জানিয়ে দিয়েছে, ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে প্রবাসী আয় আনা যাবে না।
মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন রেমিট্যান্স হাউসগুলোর কর্মকর্তারা জানান, চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোই ১২৩-১২৪ টাকায় ডলার কেনার চাহিদা দিয়েছিল। সে জন্য তখন বেশি মানুষ তাঁদের মাধ্যমে আয় পাঠিয়েছিলেন। এখন বেশির ভাগ ব্যাংক ১১০ টাকা ৫০ পয়সার বেশি দাম দিতে রাজি হচ্ছে না।
কমল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
গত বছরের মার্চে শুরু হওয়া ডলার–সংকট এখনো কাটেনি। প্রতি মাসে যে পরিমাণ ডলার খরচ হচ্ছে, ডলার আসছে তার চেয়ে কম। যদিও আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় নতুন ঋণপত্র খোলা কমেছে। তবে আগের আমদানি দায়, বিদেশি ঋণ শোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমছে। গত অক্টোবরে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৪৭ কোটি ডলার, যা গত ১৫ নভেম্বর কমে হয় ২ হাজার ৫২৬ কোটি ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ হবে ১ হাজার ৯৬০ কোটি ডলার। এ ছাড়া নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের কম।