আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ব্যাংক খাতের জন্য যে ধরনের সংস্কার চায়, তার প্রয়োজন আছে। ব্যাংক খাতে যে খেলাপি ঋণ, তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এটা কমাতে উদ্যোগ নিতেই হবে।
এ উদ্যোগ আরও আগে নেওয়া দরকার ছিল। এখন নেওয়া হচ্ছে আইএমএফের চাপে। আমি মনে করি, ব্যাংকের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বিবেচনায় নেওয়া হলে তাতে ব্যাংকের মুনাফা অনেক কমে যাবে। এ ছাড়া ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালকদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরির বিষয়েও আইএমএফ পরামর্শ দিয়েছে বলে শুনছি। যদি সেটি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে তা ভালো পরামর্শ।
ব্যাংকে এখন যেসব স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা কোনো না কোনোভাবে মালিকপক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই প্রথা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ হতে হবে আরও স্বচ্ছ। শুধু নিয়োগেই সীমাবদ্ধ না থেকে তাঁদের ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। তাহলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ভারসাম্য আসবে। এখন দেশের ব্যাংকগুলোতে যেসব স্বতন্ত্র পরিচালক আছেন, তাঁরা তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না। পারলে ব্যাংকগুলোতে যে অনিয়ম আলোচনায় এসেছে, তা এত দূর আসত না। পর্ষদে এসব ঋণ অনুমোদনই হতো না।
ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকেরা যদি সত্যিকারভাবে ওই ব্যাংকের জন্য কাজ করতে চান, তাহলে তাঁকে প্রতিষ্ঠানটির খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে হবে। তাহলেই কেবল স্বতন্ত্র পরিচালকেরা প্রকৃত অর্থে সাধারণ মানুষের আমানত রক্ষার পাহারাদার হিসেবে ব্যাংকে কাজ করতে পারবেন। আর পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করতে হলে পর্ষদ সভার ভাতার পরিমাণও বাড়ানো দরকার।
দেশের ব্যাংকগুলো বিভিন্নভাবে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। এটা কমাতে হবে। তবে সব ক্ষেত্রে হাত দেওয়া যাবে না। কারণ, দেশে তৈরি পোশাক খাত ছাড়া আর বড় কোনো শিল্প খাত নেই। যেখানে ব্যাংক খাত আরও মনোযোগ দিতে পারে। চামড়াশিল্প এখনো রপ্তানি আয়ে ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করতে পারেনি। তবে দেশে কিছু শিল্প গ্রুপ আছে, যারা ভালো করছে। ব্যাংকগুলো তাদের সঙ্গে কাজ করছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগ বৈচিত্র্যকরণ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে পারে না।
আগামী দিনে ব্যাংক খাতে একীভূতকরণ সুবিধা চালু করতেই হবে। দেশের বাইরে এমন ঘটনার নজির আছে। এটা অনেক আগে থেকেই আমরা বলে আসছি। আইএমএফের পরামর্শে ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগের মধ্যে এ আলোচনাকেও জোরেশোরে সামনে আনা উচিত।
আনিস এ খান,সাবেক চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)