উত্তরা ফাইন্যান্সের পর্ষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ

এখন প্রতিষ্ঠানটির পর্ষদ পুনর্গঠন করে স্বতন্ত্র পরিচালক বসাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক লোগো

ঋণ অনিয়মের কারণে সংকটে পড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্সের পর্ষদ পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাদ পড়বেন বর্তমান পর্ষদে থাকা পরিচালকেরা।

নতুন পরিচালকদের সবাই হবেন স্বতন্ত্র পরিচালক। সম্ভাব্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের এ তালিকা পাঠানো হয়।

আর্থিক অনিয়মের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি সংকটে পড়ে। তাতে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিয়েও শঙ্কা দেখা দেয়। অন্যদিকে অনিয়মে ডুবতে বসা প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগের জন্য স্বতন্ত্র পরিচালকের তালিকা চেয়ে বিএসইসিতে চিঠি পাঠানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরা ফাইন্যান্সের বেশির ভাগ পরিচালকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির টাকা তাঁরা নিজেদের হিসাবে নিয়ে খরচ করেছেন। ফলে তাঁদের রেখে এই প্রতিষ্ঠানটি চালানোর সুযোগ নেই। এ জন্য বর্তমান পর্ষদ পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে।

জানা যায়, সম্প্রতি কোম্পানিটিতে নিয়োগের জন্য ১২ জন স্বতন্ত্র পরিচালকের একটি তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে বিএসইসি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মতিক্রমে এসব পরিচালককে উত্তরা ফাইন্যান্সের পরিচালনায় যুক্ত করা হবে।

বিএসইসির পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তাঁরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার, ঢাবির কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হাফিজ মো. হাসান, অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, অবসরে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা মইনুর রহমান চৌধুরী, ঢাবি অধ্যাপক মাহফুজুল হক, সনদধারী হিসাববিদ মাহমুদ হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, হিসাববিদ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টস মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ব্যবসায়িক আইন বিশেষজ্ঞ কাউসার আহমেদ, ঢাবি অধ্যাপক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম ও সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল। তাঁদের মধ্যে সৈয়দ ফরহাত আনোয়ারকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সমন্বয় ও যোগাযোগ অনেক বেড়েছে। তারই অংশ হিসেবে উত্তরা ফাইন্যান্সে নিয়োগের জন্য স্বতন্ত্র পরিচালকের একটি তালিকা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দেয়। ওই চিঠির জবাবে আমরা ১২ জনের নাম পাঠিয়েছে।’

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, উত্তরা ফাইন্যান্সের পর্ষদ ভেঙে প্রতিষ্ঠানটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক বসাতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণেই স্বতন্ত্র পরিচালকদের নামের তালিকা চেয়ে বিএসইসিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত জুনে উত্তরা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম শামসুল আরেফিনকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে উত্তরা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। উত্তরা ফাইন্যান্স থেকে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ আত্মসাতে অন্যদের সহায়তা ও আর্থিক প্রতিবেদনে তথ্য গোপনের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে, উত্তরা ফাইন্যান্সের ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে মার্চেন্ট ব্যাংকিং ও শেয়ারবাজারের মার্জিন ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকা জমা হয়েছে উত্তরা ফাইন্যান্সের বিভিন্ন পরিচালকের ব্যাংক হিসাবে। কোনো ধরনের আবেদন, প্রস্তাব বা অনুমোদন ছাড়া পরিচালকদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরাসরি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এর বাইরে উত্তরা মোটরস ও উত্তরা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩৩৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যার কোনো অনুমোদন নেই।

এসব অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটির এমডিকে অপসারণের পাশাপাশি নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে একসময়কার ভালো মানের এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি সংকটে পড়ে। এ অবস্থায় শেয়ারবাজারেও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দামে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৪১ টাকা থেকে কমে নেমে আসে ৩৪ টাকায়।