আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্সের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) শহীদুল ইসলামের পদত্যাগ আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি তাঁর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শহীদুল ইসলামের কারণে প্রাইম ফাইন্যান্সের পাশাপাশি ফারইস্ট ফাইন্যান্সও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাতে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠান দুটি। নথিপত্রে প্রাইম ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ এখন ১৯ শতাংশ বা ১২৮ কোটি টাকা হলেও প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৮০ শতাংশের বেশি। কারণ, সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণ আদায় করতে পারছে না প্রাইম ফাইন্যান্স। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব ঋণকে খেলাপিও দেখানো যাচ্ছে না।
প্রাইম ফাইন্যান্সের কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৫ সালে শহীদুল ইসলাম কয়েক বছর ফারইস্ট ফাইন্যান্সের স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিতে বড় অঙ্কের আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি এখন গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। নথিপত্রে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ এখন ৮৭৮ কোটি টাকা বা ৯৪ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠান দুটির বেহাল অবস্থার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে যাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তাঁদের একজন শহীদুল ইসলাম। এর বাইরে ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ফারইস্ট ফাইন্যান্সসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থাকা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁদের মধ্যে আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারির জন্য দেশজুড়ে আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারও। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক খাতের সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের এখন দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও পদত্যাগ আটকে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে।
জানতে চাইলে প্রাইম ফাইন্যান্সের এমডি আহসান কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাইম ফাইন্যান্সের চাকরিরত অবস্থায় সিএফও কীভাবে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের পরিচালক হলেন, এটা আমি জানি না। ওটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’
গত বছরের জুনে এক প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিএফও, কোম্পানি সচিবের পদত্যাগের এক মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। আর এমডিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিদেশ যাত্রায় অনুমতিও নিতে হবে। সেই নির্দেশনার আলোকে প্রাইম ফাইন্যান্সের সিএফওর পদত্যাগ আটকে দেওয়া হয়।