পুরুষের সমান হিসাব খুলেছেন নারীরাও

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেবা নিচ্ছেন গ্রাহকেরা। গতকাল রাজশাহী নগরের মনি চত্বর এলাকায়
ছবি: শহীদুল ইসলাম

দেশের বেসরকারি ব্যাংকে গত ৪০ বছরে যত নারী গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন, মাত্র ৯ বছরে একই সমপরিমাণ নারী গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায়। এটা সম্ভব হয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে যাওয়ায়। কারণ, ব্যাংকের এজেন্টরা সবাই স্থানীয়। তাই তাঁদের প্রতি স্থানীয়দের আস্থাও থাকে।

এ ছাড়া গত ৪০ বছরে ব্যাংকের শাখা পৌঁছেছে জেলা ও উপজেলা শহরে আর এজেন্টরা পৌঁছে গেছেন গ্রামে গ্রামে। এতে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গ্রাহকদের অর্ধেকই এখন নারী। প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া এই সেবা নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতেও বড় ধরনের অবদান রাখছে। পাশাপাশি দেশের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার আওতায় আনছে এজেন্ট ব্যাংকিং।

এজেন্টদের কাছে নারী-পুরুষের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবসায়িক হিসাবও খোলা যায়। গত নভেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার আওতায় ব্যাংক হিসাব ছিল ১ কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার। এর মধ্যে নারী ব্যাংক হিসাব ছিল ৮৩ লাখ ৪৮ হাজার ও পুরুষদের হিসাব ছিল ৮৬ লাখ ৪৬ হাজার। বাকি হিসাব প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবসায়িক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক খাতে নারীদের যে হিসাব খোলা হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায়। নারীদের এই সেবায় দ্রুত যুক্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণত ব্যাংকের শাখা বাড়ি থেকে দূরে থাকে। কিন্তু এজেন্টরা থাকে বাড়ির কাছাকাছি। তাই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নারীরা সহজেই গ্রাহক হয়েছেন। মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহককে নিজের নম্বর দিতে হয়, যা নিয়ে পরে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেককে। তবে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় মোবাইল নম্বরের প্রয়োজন হয় না। তাই স্বাচ্ছন্দ্যে অনেকে হিসাব খোলেন। বর্তমানে আমাদের ব্যাংকের প্রবাসী আয়ের অর্ধেকই আসছে এজেন্টদের মাধ্যমে। ব্যাংক হিসাবের ব্যবহার বিবেচনা করে সামনে নারীরা ঋণসুবিধাও পাবেন, যা দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।’

এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব খোলার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পুরুষ গ্রাহকের হিসাব ছিল ১৬ লাখ ১৯ হাজার। আর নারী গ্রাহকের হিসাব ছিল ৮ লাখ ৯ হাজার। অর্থাৎ যে পরিমাণ পুরুষ হিসাব খুলেছিল, নারী গ্রাহকের হিসাব ছিল তার অর্ধেক। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই ব্যবধান কমে আসে। ওই সময় নারী গ্রাহকের হিসাব ছিল ২২ লাখ, আর পুরুষ গ্রাহকের হিসাব ছিল ২৯ লাখ।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে নারী গ্রাহকের হিসাব বেড়ে হয় ৪০ লাখ ৭৫ হাজার ও পুরুষ গ্রাহকের হিসাব বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ লাখ ৮২ হাজার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর নারী গ্রাহকের হিসাব বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ লাখ ৫০ হাজার ও পুরুষ গ্রাহকের হিসাব বেড়ে হয় ৭৩ লাখ ২৯ হাজার। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখের বেশি নারী গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায়।

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে টাকা জমা ও উত্তোলনের পাশাপাশি ছোট অঙ্কের ঋণ, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিলও দেওয়া যায়। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের বড় অংশ আসছে এখন এই সেবার মাধ্যমে। ফলে কাজের উদ্দেশে যাঁরা বিদেশ গেছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বেশির ভাগই এখন এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আয় গ্রহণ করছেন।

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় ২০১৪ সালে।ওই বছর ব্যাংক এশিয়া ও অগ্রণী ব্যাংক এ সেবাটি চালু করে।এখন দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ৩১টি ব্যাংক।যেসব ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে সেগুলো হলো এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ডাচ্‌বাংলা ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক।