এবার ঈদে সবচেয়ে কম নতুন নোট বাজারে, চেষ্টা করেও পাননি অনেক গ্রাহক

টাকাফাইল ছবি

ঈদে সব সময়ই নতুন টাকার বেশ চাহিদা থাকে। বিশেষ করে ঈদের সালামিতে সবাই চেষ্টা করেন নতুন টাকা দিতে। আর নতুন টাকায় সালামি পেতে মুখিয়ে থাকেন ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সীরা। উৎসবের রং আরও রাঙিয়ে তুলতে তাই সবাই ঈদের আগে নতুন নোট সংগ্রহের চেষ্টা করেন। কেউ সংগ্রহ করেন ব্যাংক থেকে আর কেউ কেউ খোলাবাজার থেকে বাড়তি দামে নতুন নোট কেনেন। কিন্তু এবার ঈদকে সামনে রেখে বাজারে নতুন টাকার সংকট ছিল। ফলে নতুন নোট সংগ্রহের চেষ্টা করেও অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ঢাকা অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যাংকের ৮০টি শাখায় নতুন নোট সরবরাহ করা হয়েছিল। এসব শাখায় ১০০ কোটি টাকার মতো নতুন নোটের সরবরাহ করা হয়। এর বাইরে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে আরও ১০০ কোটি টাকা সরবরাহ করা হয়। তফসিলি বিভিন্ন ব্যাংকের শাখার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব কার্যালয়েও পুরোনো নোট দিয়ে নতুন নোট অদলবদলের সুযোগ ছিল। তবে গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন, এবার ঈদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যালয়ে গিয়েও নতুন নোট পাননি বেশির ভাগ গ্রাহক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদকে সামনে রেখে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম নতুন নোট সরবরাহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সারা দেশে নতুন নোট সরবরাহ করা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকার। অথচ গত বছরের ঈদুল ফিতরের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছেড়েছিল। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ঈদুল ফিতরের আগে বাজারে ছাড়া হয়েছিল ২৩ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট। সেই হিসাবে এবার নতুন নোট বাজারে সবচেয়ে কম।

রাজধানীর ইস্কাটনের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ঈদের আগে রাষ্ট্রমালিকানাধীন একটি ব্যাংকের কাছে ১ লাখ টাকার নতুন নোট চেয়ে পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবার আরও বেশি টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করি। এবার নতুন নোট কম ছিল বিধায় এক লাখ টাকার সমপরিমাণ নতুন নোট চেয়েছিলাম। তা–ও পুরোটা পায়নি।’

ঢাকার একাধিক ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, নতুন নোট কত বাজারে আসবে, সে সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নতুন নোট সরবরাহ করা হয়েছে খুবই কম।

দরদাম ও বাজার যেমন

প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদকে সামনে রেখে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়। ১০ টাকার একটি বান্ডিলের (১০০টি নোট) মূল্যমান ১ হাজার টাকা। নতুন নোটের এমন একটি বান্ডিল খোলাবাজার থেকে কিনলে ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দাম দিতে হয়। অর্থাৎ নতুন নোটের প্রতি বান্ডিলে ক্রেতাদের বাড়তি ১৫০-২০০ টাকা খরচ করতে হয়। শুধু ১০ টাকা নয়, খোলাবাজার থেকে কিনলে সব ধরনের নোটের জন্যই বাড়তি দাম দিতে হয়।

খোলাবাজারের নতুন নোটের বেশ কয়েকজন ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় নতুন নোটের দাম প্রতি বান্ডিলে ৩০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাঁচ বছর আগে এই দাম আরও কম ছিল।

গুলিস্তানের নতুন টাকার বিক্রেতা আব্বাস আলী প্রথম আলোকে বলেন, নতুন টাকা সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলোয় তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। তারপরও তাঁরা বিভিন্নভাবে নতুন নোট সংগ্রহ করেন। কয়েক হাত ঘুরে এসব নোট তাঁদের হাতে আসায় দাম বেড়ে যায় বলে দাবি তাঁর।

দেশে দুই ধরনের নোট রয়েছে—ব্যাংক নোট ও সরকারি নোট। ব্যাংক নোট ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে। আর সরকারি নোট বাজারে ছাড়ে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে থাকে অর্থসচিবের সই।

স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন ৫ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট হিসেবে ছিল। ২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ কয়েনেজ আইন সংশোধন করে ৫ টাকাকে সরকারি মুদ্রা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রচলিত ১, ২ ও ৫ টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা সরকারি মুদ্রা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। অন্যদিকে ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট হচ্ছে ব্যাংক নোট।