বিদেশ ভ্রমণে নিশ্চিন্ত থাকতে ‘ডুয়েল কারেন্সি কার্ড’

ভ্রমণকারীর পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড
ছবি: সংগৃহীত

ক্যাশলেস লেনদেনের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে একই কার্ড দিয়ে এখন দেশের বাইরেও অর্থনৈতিক লেনদেন সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আর্থিক খাতেও এসেছে বিপ্লব, যার অন্যতম উদাহরণ হলো, ‘দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড’ বা ‘ডুয়েল কারেন্সি কার্ড’। এটি এমন একটি কার্ড, যার সাহায্যে একই সঙ্গে দেশীয় এবং বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের সুযোগ রয়েছে। ফলে এই কার্ডের মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণের সময় নগদ অর্থ বহনের ঝামেলা ছাড়াই কেনাকাটা, হোটেল বুকিং, রেস্তোরাঁয় বিল পরিশোধ, এমনকি এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন সম্ভব। দেশের বাইরে ভ্রমণের সময় নগদ অর্থ বহন করা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি বিদেশে গিয়ে বারবার মুদ্রা বিনিময়ের কাজটিও বেশ ঝামেলার। এই দুটি সমস্যার সহজ সমাধান হয় বলে অনেক ভ্রমণকারীর পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড।

বর্তমানে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক ডুয়েল কারেন্সি কার্ড সরবরাহ করছে, যা আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, পর্যটক বা চিকিৎসার প্রয়োজনে যাঁরা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন, তাঁদের জন্য এই কার্ড অত্যন্ত কার্যকর ও নিরাপদ একটি সমাধান। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইটে কেনাকাটা, সাবস্ক্রিপশন ফি পরিশোধ কিংবা বিদেশি প্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি দেওয়ার ক্ষেত্রেও এটি বেশ সহায়ক। তাই যাঁরা নিয়মিত আন্তর্জাতিক লেনদেন করেন, তাঁদের জন্য ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নিশ্চিন্ত একটি মাধ্যম।

কীভাবে কাজ করে

ডুয়েল কারেন্সি কার্ড এমন বিশেষ ধরনের কার্ড, যার সাহায্যে একই সঙ্গে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মুদ্রায় লেনদেন সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে থাকলে এই কার্ডের মাধ্যমে টাকায় যেমন লেনদেন করা যাবে, তেমনি স্থানীয় মুদ্রা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য যেকোনো দেশের স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরিত করে লেনদেন করা যাবে। ফলে দেশের বাইরে নগদ ডলার কিংবা ইউরো বহনের প্রয়োজন পড়ে না, বরং সরাসরি কার্ড ব্যবহার করেই সব ধরনের লেনদেন সম্পন্ন করা যায়। অধিকাংশ ব্যাংক এই কার্ডগুলো ভিসা ও মাস্টারকার্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালনা করে, যা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই গ্রহণযোগ্য।

যেসব ব্যাংকের কার্ডে এই সুবিধা পাবেন

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য ডুয়েল কারেন্সি কার্ড চালু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ইস্টার্ণ ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো কার্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন যেমন সহজ করেছে, তেমনি গ্রাহকদের জন্য যোগ করেছে বাড়তি সুবিধাও, যেমন বিশেষ ছাড়, ক্যাশব্যাক অফার ইত্যাদি।

ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা

বিদেশে গিয়ে বারবার মুদ্রা পরিবর্তন করার ঝামেলা থেকে বাঁচায় ডুয়েল কারেন্সি কার্ড। দেশের বাইরে গিয়ে যেকোনো দোকান, রেস্তোরাঁ বা শপিং মলে সরাসরি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করা যায়। এ ছাড়া নিরাপত্তা ও ‘ফ্রড মনিটরিং’য়ের জন্য ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের বিকল্প নেই। নগদ অর্থ চুরি কিংবা হারানোর ঝুঁকি থাকে, কিন্তু এই কার্ড হারিয়ে গেলেও তা সহজেই ব্লক করা যায়। ব্যাংকগুলোর ফ্রড মনিটরিং সিস্টেম সন্দেহজনক যেকোনো লেনদেন শনাক্ত করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহককে সতর্ক করে। সেই সঙ্গে ব্যাংকের বিনিময় হার মানি এক্সচেঞ্জের চেয়ে সাশ্রয়ী। আর এই কার্ড ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা, হোটেল বুকিং, প্লেনের টিকিট কেনা এবং শিক্ষাগত ও চিকিৎসা খরচ পরিশোধ করা যায় খুব সহজেই।

ব্যবহারের আগে জানতে হবে যেসব বিষয়

ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ বিদেশে এই কার্ড ব্যবহারের জন্য পাসপোর্টে বৈদেশিক মুদ্রার অনুমোদন করাতে হবে। এটি ছাড়া অনেক সময় কার্ডটি কার্যকর না–ও হতে পারে। এ ছাড়া এই কার্ডগুলোর ক্ষেত্রে অনেক সময় অর্থনৈতিক লেনদেনের একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকতে পারে। কিছু ব্যাংক নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি উত্তোলন বা ব্যয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করে থাকে। কার্ডের পিন, সিভিভি নম্বর ও অন্যান্য গোপন তথ্য সংরক্ষিত রাখা অত্যন্ত জরুরি। সন্দেহজনক ওয়েবসাইটে কার্ডের তথ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। আর বিদেশে এটিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। অপরিচিত বা সন্দেহজনক স্থান থেকে টাকা তোলার পরিবর্তে ব্যাংকের শাখা বা নির্ভরযোগ্য এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা নিরাপদ। কিছু দেশে আন্তর্জাতিক কার্ডের জন্য অতিরিক্ত চার্জ নেওয়া হয়, তাই ব্যাংকের শর্তাবলি সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। পাশাপাশি এটিএম ব্যবহারের পরপরই এসএমএস ও অ্যাপ নোটিফিকেশন দেখে নিশ্চিত হতে হবে কোনো অতিরিক্ত টাকা কাটা হয়েছে কি না।