ন্যূনতম বয়স হতে হবে ৪৫ বছর

বাংলাদেশ ব্যাংকছবি: সংগৃহীত

এখন থেকে ৪৫ বছরের কম বয়সের কেউ ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। স্বতন্ত্র পরিচালকদের বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ বছর। এ ছাড়া ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে হলে দেশের স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন, হিসাববিজ্ঞান বা কস্ট অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। 

ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন এ বিধিবিধান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল প্রথমবারের মতো ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকদের যোগ্যতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য–সংক্রান্ত এ বিধান জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকালই এ– সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এর আগে ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম–কেলেঙ্কারি রোধে নতুন পথনকশা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই পথনকশার আওতায় স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের এ বিধান করা হয়েছে। নতুন বিধানে বলা হয়েছে, বয়সের পাশাপাশি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে গেলে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপাশি কোনো ব্যাংকে তাঁর নিজের বা পরিবারের নামে শেয়ার থাকলে কিংবা পরিবারের কেউ ওই ব্যাংকে লাভজনক কোনো পদে কর্মরত থাকলে স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়া যাবে না। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরাসরি অভিযোগ বা মতামত জানাতে পারবেন।

স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদ বা ব্যবসায় প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক, আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি, পেশাদার হিসাববিদ, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, বাণিজ্য, অর্থ, শিল্প ও আইন মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা অগ্রাধিকার পাবেন।

এ ছাড়া বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পাওনাদারের প্রাপ্য পরিশোধ না করলে বা পাওনাদারের সঙ্গে আপসরফার মাধ্যমে পাওনা আদায় থেকে অব্যাহতি না পেলে তিনি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। এমনকি করখেলাপি, ঋণখেলাপি, জালজালিয়াতির সঙ্গে জড়িত, কারও বিরুদ্ধে আদালতের রায়ে বিরূপ পর্যবেক্ষণ থাকলে তাঁরা স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবেন। পাশাপাশি নিবন্ধন বাতিল হওয়া বা অবসায়িত কোম্পানির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিও ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। নতুন বিধান অনুযায়ী, একজন স্বতন্ত্র পরিচালক তিন বছর করে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নতুন বিধান অনুযায়ী কোনো স্বতন্ত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলাজনিত বিরূপ পর্যবেক্ষণ পাওয়া গেলে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। একটি ব্যাংকে ২০ জন পরিচালক থাকলে তার মধ্যে কমপক্ষে তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে। আর যেসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২০ সদস্যের কম হবে, সেখানে ন্যূনতম স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে ২ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নতুন বিধান করা হলেও বর্তমান স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে যাঁদের এসব যোগ্যতা নেই, তাঁরা মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই পদে থাকতে পারবেন। ফলে এখনই কাউকে পদ ছাড়তে হবে না।

 প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র পরিচালকেরা প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা স্থায়ী সম্মানী পাবেন। আগে অবশ্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের স্থায়ী সম্মানী ছিল না। এ ছাড়া কোম্পানির পর্ষদ বা সহায়ক কমিটির প্রতিটি সভায় উপস্থিতির জন্য সম্মানী হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পাবেন তাঁরা।

কোনো ব্যাংক যদি যোগ্য স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগের একটি বিধান রাখা দরকার ছিল।
আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক পিআরআই

কোনো ব্যাংক চাইলেই কোনো স্বতন্ত্র পরিচালককে সরাতে পারবে না। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে।

দেশে ব্যাংকগুলোর স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা নিয়ে অনেক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। কারণ, অনেক ব্যাংক চেয়ারম্যান নিজেদের আত্মীয় ও কর্মচারীকে নিজ ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আসছেন। এসব পরিচালক আমানতকারী ও শেয়ারধারীদের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারছেন না।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে বর্তমানে যেভাবে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাতে আমানতকারী নয়; বরং পরিচালকদের স্বার্থই বেশি সংরক্ষিত হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, যেসব বিধান করা হয়েছে, তা মোটামুটি ঠিকই আছে। তবে কোনো ব্যাংক যদি যোগ্য স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগের একটি বিধান রাখা দরকার ছিল। এ ছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা পর্ষদের অন্তত ৩০ শতাংশ করা দরকার ছিল। তা না হলে স্বতন্ত্র পরিচালকদের পক্ষে জোরালো মতামত রাখা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।