সৌরবিদ্যুতে চলে শাখা ও এটিএম

কোনো কোনো ব্যাংকের শাখায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধা চালু করা হয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি বেশির ভাগ ব্যাংক শাখাই এখন অনলাইনের আওতায়। ফলে গ্রাহকেরা চাইলে নিজ ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে লেনদেন করতে পারছেন। পাশাপাশি অর্থ লেনদেনের বিকল্প মাধ্যম এটিএম, সিডিএম (টাকা জমা দেওয়ার যন্ত্র), ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ নানা মাধ্যমেও সার্বক্ষণিক লেনদেন চালু আছে। পাশাপাশি মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) আর্থিক লেনদেনকে জনগণের পুরো হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। সব মিলিয়ে টেকসই ব্যাংকিং কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ব্যাংকগুলো টেকসই খাতে অর্থায়নের পাশাপাশি নিজেরাও শাখা ও এটিএমগুলোয় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। কোনো কোনো ব্যাংকের শাখায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধা চালু করা হয়েছে, যা পরিবেশ ভালো রাখতে সহায়তা করছে। পাশাপাশি কিছু ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতেও (সিএসআর) পারদর্শিতা দেখিয়ে যাচ্ছে। কিছু ব্যাংক সিএসআরের বেশির ভাগ অর্থ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে খরচ করছে, যার সুবিধা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তবে অধিকাংশ ব্যাংক এমন উদ্যোগে যাচ্ছে না।

যেসব কারখানায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়, সেখানেও আমরা অর্থায়ন করছি, যা ধরণিকে বসবাসযোগ্য রাখতে সহায়তা করছে।
আরিফ কাদরী, এমডি, ইউসিবি

ব্যাংকিং কার্যক্রমের নানা সূচকের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা টেকসই রেটিংয়ে বেসরকারি প্রাইম ব্যাংক দ্বিতীয়বারের মতো স্থান করে নিয়েছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাসান ও. রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘টেকসই অর্থায়নের কোনো বিকল্প নেই। পোশাক খাতের ক্রেতারা এখন নানা শর্ত বেঁধে দিচ্ছেন। ফলে উদ্যোক্তাদের সবাই পরিবেশবান্ধব কারখানা না করতে পারলেও টেকসই নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন। ফলে এই খাতে ব্যাংকের অর্থায়ন বাড়ছে। আমাদের পরিচালনা পর্ষদ এই বিষয়ে খুবই সক্রিয়।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের মার্চে দেশে ব্যাংকের শাখা ছিল ১০ হাজার ৯৩৬টি। এর মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ–সুবিধা চালু ছিল ১৪৮টি শাখায়। এ বছরের মার্চে ব্যাংকগুলোর শাখা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৬৬৪টি, আর সৌরবিদ্যুৎযুক্ত শাখা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯৪টিতে।

মাঝখানে ২০২২ সালের মার্চে সৌরবিদ্যুৎ–সুবিধা চাল ছিল ৭০৬টি শাখায়। এ সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, সারা দেশে বিদ্যুৎ–সুবিধা চলে যাওয়ায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার কম হয়। কারণ, সৌরবিদ্যুৎ–সুবিধা নিয়মিতভাবে ব্যবহার ও মেরামত না করলে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে সৌরবিদ্যুতের সুবিধাসম্পন্ন শাখার সংখ্যা কমেছে।

এ ছাড়া গত ২০২১ সালের মার্চে বিভিন্ন ব্যাংকের ৬৪৬টি শাখায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধা চালু ছিল, যা এ বছরের মার্চে কমে ৩২৩টিতে নেমেছে। চলতি বছরের মার্চে ১১ হাজার ২৭৭টি এটিএমের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ–সুবিধা ছিল ৭১টিতে। ২০২১ সালের মার্চে এ ধরনের শাখা ছিল ২৬৬টি।

টেকসই রেটিংয়ে স্থান পাওয়া যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই স্বীকৃতি শুধু দায়িত্বশীল ব্যাংকিং অনুসরণ এবং স্থায়িত্বের প্রতি ব্যাংকের নিবেদনই নিশ্চিত করে না, বরং আরও উৎকর্ষের জন্য আমাদের টেকসই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যমুনা ব্যাংক সিএসআর খাতের প্রতি বিশেষ মনোযোগী। প্রতিবছর মুনাফার ৫ শতাংশ সিএসআর খাতে বরাদ্দ রাখা হয়।’

ব্যাংক ভবন পরিবেশবান্ধব করেছে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ঢাকার গুলশানে গড়ে তোলা শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক টাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিবিসির লিড গোল্ড সনদপ্রাপ্ত, যা দেশের ব্যাংক খাতে এ ধরনের একমাত্র ভবন। ভবনটি ৩৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ও পানিসাশ্রয়ী। অন্যদিকে রাজধানীর বাংলামটরে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমটিবি টাওয়ারেও রয়েছে এ ধরনের বিভিন্ন সুবিধা। এমন উদ্যোগ নিচ্ছে আরও অনেক ব্যাংক।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকও (ইউসিবি) টেকসই রেটিংয়ে স্থান করে নিয়েছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পরিবেশবান্ধব খাতে অর্থায়নে নজর বাড়িয়েছি। বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানায়। আবার যেসব কারখানায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়, সেখানেও আমরা অর্থায়ন করছি, যা ধরণিকে বসবাসযোগ্য রাখতে সহায়তা করছে।’