অতিরিক্ত সঞ্চিতির বিধান প্রত্যাহার চায় বিএমবিএ

অতিরিক্ত ১% সাধারণ সঞ্চিতি রাখা হলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি ব্যাংকের নিট মুনাফাও কমবে বলে মনে করে বিএমবিএ।

ব্যাংকের সব ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ১ শতাংশ সাধারণ সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখার বাধ্যবাধকতা শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক সংগঠন বিএমবিএ। এ কারণে তারা এ বিধান বাতিলের দাবি জানিয়েছে। বিএমবিএ নেতারা বলছেন, পুঁজিবাজার যখন ইতিবাচকভাবে ঘুরতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থবিরোধী। নতুন এ বিধানের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরতে পারে।

কোভিড-১৯–এর কারণে ব্যাংকগুলো অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কঠিন সময় পার করছে। হঠাৎ করে সঞ্চিতির প্রজ্ঞাপনটি জারি হওয়ায় তারা ঝামেলায় পড়তে পারে। তাই বিষয়টি চাইলে পুনর্বিবেচনা করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম , বিএসইসির চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে এসব কথা জানিয়ে বাড়তি সঞ্চিতির বিধানটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই)। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনটি জারি করে ১০ ডিসেম্বর।

জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোভিড-১৯–এর কারণে ব্যাংকগুলো অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কঠিন সময় পার করছে। হঠাৎ করে সঞ্চিতির প্রজ্ঞাপনটি জারি হওয়ায় তারা ঝামেলায় পড়তে পারে। তাই বিষয়টি চাইলে পুনর্বিবেচনা করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

তাদের আবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাংক খাতকেও তো দেখতে হবে। এই যে ঋণের কিস্তি বন্ধ, বিপরীতে সঞ্চিতি তো দরকারই
সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র

৩১ ডিসেম্বরের ঋণ স্থিতির বিপরীতেই বাড়তি সঞ্চিতি সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের দেওয়া ঋণের পরিমাণ গত সেপ্টেস্বর পর্যন্ত ১১ লাখ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে খেলাপি হয়নি—এমন ঋণই ৯ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে, গভর্নরকে দেওয়া চিঠিতে ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম, ন্যাশনাল, ইউসিবি, আল-আরাফা ইসলামী, সাউথ ইস্ট, পূবালী, সোশ্যাল ইসলামী এবং ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের নাম উল্লেখ করে বিএমবিএ বলেছে, গত বছর এই ১০ ব্যাংক কর–পরবর্তী নিট মুনাফা করেছিল ২ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। আর এ বছর তাদের সঞ্চিতিই রাখতে হবে ৩ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাদের আবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাংক খাতকেও তো দেখতে হবে। এই যে ঋণের কিস্তি বন্ধ, বিপরীতে সঞ্চিতি তো দরকারই।

তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাংক খাত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে আছে। তাই বাজারের স্বার্থে বাড়তি সঞ্চিতি রাখার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহারে বিএমবিএর দাবির সঙ্গে আমরা একমত
আসিফ ইব্রাহীম, সিএসইর চেয়ারম্যান

বিএমবিএ চিঠিতে জানায়, ৩০টি তালিকাভুক্ত ব্যাংক ২০১৯ সালে কর–পরবর্তী নিট মুনাফা করেছিল ৭ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত তা দাঁড়াবে ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকায়। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করতে গেলে ব্যাংকগুলোকে ৯ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত সঞ্চিতি রাখতে হবে।

জানতে চাইলে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাংক খাত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে আছে। তাই বাজারের স্বার্থে বাড়তি সঞ্চিতি রাখার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহারে বিএমবিএর দাবির সঙ্গে আমরা একমত।’

বাড়তি সঞ্চিতির বাধ্যবাধকতা বাজারে ভুল বার্তা দিচ্ছে। ডিএসই-সিএসইও একই কথা বলছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আমরা দাবি করেছি, নতুন হার যেন প্রত্যাহার করা হয়
মো. ছাইদুর রহমান, বিএমবিএ সভাপতি

বিএমবিএ চিঠিতে বলেছে, নীতি সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এত দিন পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক ভূমিকাই পালন করে আসছিল। কিন্তু নতুন প্রজ্ঞাপনের কারণে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যেতে পারে।

বিএমবিএ সভাপতি মো. ছাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়তি সঞ্চিতির বাধ্যবাধকতা বাজারে ভুল বার্তা দিচ্ছে। ডিএসই-সিএসইও একই কথা বলছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আমরা দাবি করেছি, নতুন হার যেন প্রত্যাহার করা হয়।’