অনিয়ম নয়, চুরি-ডাকাতি হয়েছে: আলাউদ্দিন

আলাউদ্দিন এ মজিদ

সরকারি খাতের বেসিক ব্যাংক এখনো ডুবন্ত অবস্থায়। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে এই ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়, যার বেশির ভাগই ব্যাংকটি আদায় করতে পারছে না। বেসিক ব্যাংককে উদ্ধারে ২০১৪ সালের ৬ জুলাই চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন আলাউদ্দিন এ মজিদ। গত ২৭ জুলাই তাঁর মেয়াদ শেষ হয়েছে। আবদুল হাইয়ের বিদায়েরও ছয় বছর হয়ে গেল। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আলাউদ্দিন এ মজিদ।


বেসিক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নিয়ে আলাউদ্দিন এ. মজিদ বলেন, ‘ব্যাংকটি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। নতুন করে কোনো খারাপ ঋণ দেওয়া হয়নি, উন্নতির চেষ্টা হচ্ছে। এখন টানেলের উল্টো দিকে আলো দেখা যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে যারা টাকা নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে তা আদায়ের চেষ্টা চলছে। চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

‘ব্যাংকটি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। নতুন করে কোনো খারাপ ঋণ দেওয়া হয়নি, উন্নতির চেষ্টা হচ্ছে। এখন টানেলের উল্টো দিকে আলো দেখা যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে যারা টাকা নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে তা আদায়ের চেষ্টা চলছে। চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
আলাউদ্দিন এ. মজিদ

ব্যাংকটিতে অনিয়মের জন্য কারও শাস্তি হয়নি, আবদুল হাই বা তৎকালীন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ জন্য কি টাকা আদায় হচ্ছে না? এ নিয়ে আলাউদ্দিন মজিদ বলেন, ‘কিছুটা এমনই। যারা টাকা নিয়েছে, তারা না দিলে কী হয়, তা পর্যবেক্ষণ করছে। তবে শাস্তি দিয়ে টাকা আদায় করা যায়, তা মনে করি না। আইন যতটা আছে, তা প্রয়োগ করতে হবে।

ব্যাংকটিতে যা হয়েছে, তা অপকর্ম বা অনিয়ম বলব না। বেসিক ব্যাংকে চুরি–ডাকাতি হয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে ব্যাংকটিকে ঠিক করা যাবে না। এ জন্য নতুন উদ্যোগ প্রয়োজন। নিশ্চয়ই নতুন কেউ দায়িত্ব নিয়ে সেই পথে যাবেন। যারা টাকা নিয়েছে, তাদের টাকা পরিশোধে বাধ্য করতে হবে। কী মামলা আছে, ওটা পরের বিষয়। আর শাস্তির বিষয়টি ব্যাংকের এখতিয়ারের বাইরে। দুদক মামলা করেছে, সরকার বিষয়টি দেখছে।’

ব্যাংকটিকে ঠিক করতে সরকারের সমর্থন ছিল না, নাকি আপনারা পারেন নি। এই প্রশ্নের উত্তরে আলাউদ্দিন মজিদ বলেন,‘আমি দুই মেয়াদে ছয় বছর চেয়ারম্যান ছিলাম, অন্য পরিচালকেরাও তা–ই। ফলে সরকারের সমর্থন পুরোপুরি ছিল। সবাই চেষ্টা করেছি। তবে একটু ধীরগতিতে ব্যাংক চালিয়েছি। ব্যাংকটিকে আগের মতো ভালো অবস্থায় ফেরাতে আমাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। আমিও রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, আমি আগে ৬ বছর (১৯৯৬–২০০১) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করেছি। তবে আমি ব্যাংকটিকে আগের ধারায় ফেরাতে পারিনি। আমি ব্যর্থ হয়েছি।’

আমি দুই মেয়াদে ছয় বছর চেয়ারম্যান ছিলাম, অন্য পরিচালকেরাও তা–ই। ফলে সরকারের সমর্থন পুরোপুরি ছিল। সবাই চেষ্টা করেছি। তবে একটু ধীরগতিতে ব্যাংক চালিয়েছি। ব্যাংকটিকে আগের মতো ভালো অবস্থায় ফেরাতে আমাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। আমিও রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, আমি আগে ৬ বছর (১৯৯৬–২০০১) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করেছি। তবে আমি ব্যাংকটিকে আগের ধারায় ফেরাতে পারিনি। আমি ব্যর্থ হয়েছি।’

ঋণের অর্ধেকের বেশি এখনো খেলাপি, অনেক ঋণগ্রহীতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, বিদেশেও পালিয়েছেন কেউ কেউ—এ অবস্থায় ব্যাংকটিকে আদৌ ভালো করা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে আলাউদ্দিন মজিদ বলেন, ‘সম্ভব। তবে নিয়মকানুনের একটু বাইরে এসে ব্যাংকটিকে ঠিক করতে হবে। আমি এ নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাই না। তবে ফলাফল হলো, আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হয়েছিলাম, তা অর্জন করতে পারিনি। এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই।’


৬ বছর এমডি, আবার ৬ বছর চেয়ারম্যান—নিজের কাজকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন, এই প্রশ্নের জবাবে আলাউদ্দিন এ মজিদের সরাসরি জবাব, ‘এমডি হিসেবে সফল, চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যর্থ।’


কেন ব্যাংকটি ভালো করা গেল না, এটা নিয়ে এখনই কথা বলতে রাজি নন আলাউদ্দিন এ মজিদ।

গত মার্চের শেষে বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকাই। অর্থাৎ ঋণের ৫২ শতাংশ খেলাপি। ২০১০ সালে শেখ আবদুল হাই দায়িত্ব নেওয়ার আগে ব্যাংকটি প্রতিবছর গড়ে ৫০ কোটি টাকা মুনাফা করে আসছিল। এখন কবে আবার মুনাফায় ফিরবে তা অনিশ্চিত।