আসছে নতুন মোবাইল আর্থিক সেবা ‘ট্যাপ’

বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো ১৬টি এমএফএস রয়েছে। গত নভেম্বর শেষে এসব সেবার গ্রাহক ছিল ৯ কোটি ৭৮ লাখ।

মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) বাজারে আসছে নতুন কোম্পানি ট্রাস্ট আজিয়াটা পে বা ট্যাপ। দেশীয় মালিকানার ট্রাস্ট ব্যাংক ও বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা ডিজিটাল মিলে এ সেবা চালু করতে যাচ্ছে। নতুন এ কোম্পানিতে ট্রাস্ট ব্যাংকের ৫১ শতাংশ ও আজিয়াটা ডিজিটালের ৪৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ট্যাপ চালু হলে এটি হবে দেশের দ্বিতীয় এমএফএস কোম্পানি, যার মালিকানায় বিদেশিরাও থাকছে। এ খাতের সবচেয়ে বড় সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ প্রথম কোম্পানি, যার মালিকানার ৪৯ শতাংশই বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির হাতে রয়েছে।

জানা গেছে, এরই মধ্যে ট্যাপ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। তার ভিত্তিতে কার্যক্রমও শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে প্রযুক্তি ও নেটওয়ার্ক উন্নয়নের কাজ চলছে। আগামী জুনের মধ্যে বড় আকারে ট্যাপের সেবা চালুর প্রক্রিয়া চলছে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার অংশীদার ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমএফএস বাজার সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ট্যাপ একটা অংশ নিতে চায়। এমএফএসের মাধ্যমে আমরা গ্রাহককে নতুন নতুন সেবা দিতে চাই।’

ট্যাপের পরিচালনা পর্ষদের সাত পরিচালকের মধ্যে চারজনই ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রতিনিধি, আর তিনজন আজিয়াটা ডিজিটালের। আজিয়াটা ডিজিটাল বর্তমানে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় এমএফএস ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে কাজে লাগাতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে ট্রাস্ট ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে ‘টিক্যাশ’ নামে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ট্যাপ চালু হওয়ার পর টিক্যাশ গ্রাহকেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্যাপের গ্রাহক হয়ে যাবে। একইভাবে টিক্যাশের এজেন্টরাও ট্যাপের এজেন্ট হয়ে যাবে। বর্তমানে টিক্যাশের ২৫ হাজার এজেন্ট ও ২৫ লাখ নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রাহক ধরতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারি ভাতা ও নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করছে ট্যাপ। আবার দেশের সব জায়গায় এজেন্ট সেবা নিশ্চিত করতে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী ও বহুজাতিক কোম্পানির পরিবেশকদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। শুরু থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও সেলফির মাধ্যমে ঘরে বসে গ্রাহক নিবন্ধনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ট্যাপের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে এজেন্ট পয়েন্ট ও ব্যাংকের সব শাখা থেকে। জমা টাকা থেকে নিয়মিত সুদও পাবেন গ্রাহকেরা।

বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটর রবিতেও বিনিয়োগ রয়েছে আজিয়াটার। রবি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি। একইভাবে এমএফএস সেবাতেও দ্বিতীয় স্থান নিতে চায় ট্যাপ।

জানতে চাইলে ট্যাপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) দেওয়ান নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন নিয়মিত গ্রাহকেরা সেবা পাচ্ছেন। আমরা বড় আকারে কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যেই তা শুরু হবে। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারে আমরা নতুন কিছু সেবা যুক্ত করব।’

বর্তমানে দেশে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো ১৬টি এমএফএস প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, গত নভেম্বর শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক ৯ কোটি ৭৮ লাখ। আর সেবা দিতে সারা দেশে এজেন্ট রয়েছে ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৫২১ জন। গত নভেম্বরে এই সেবার মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ডাক বিভাগের সেবা নগদের তথ্য নেই।