ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এমডিকে সরানোর নির্দেশ

আবদুল খালেক খান পদত্যাগ করার পর এখন সৈয়দ আবেদ হাসান ভারপ্রাপ্ত এমডি। তাঁর মাধ্যমেই টাকা বের করে নেন পি কে হালদার।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবেদ হাসানকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আইএলএফএসএলের এমডির পদ থেকে আবদুল খালেক খান পদত্যাগ করার পর গত মাসে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন সৈয়দ আবেদ হাসান, যিনি এর আগে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তার (সিএফও) দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে বিবেচিত। তাঁর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন ও জবানবন্দিতে উঠে আসে।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খানের কাছে সম্প্রতি পাঠানো এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত এমডিকে সরিয়ে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য কাউকে এমডি নিয়োগ দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চিঠিতে বলা হয়, আর্থিক অনিয়মে জড়িত হিসেবে সৈয়দ আবেদ হাসানের নাম এসেছে বিভিন্ন তদন্তে ও প্রতিবেদনে। এরপরও তাঁকে এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি, বর্তমানে পলাতক। পদে থাকার সময় বেনামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ চারটি প্রতিষ্ঠান দখল করে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন, যা এখন আদায় হচ্ছে না। এ জন্য ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেন আদালত।

আরও পড়ুন

আইএলএফএসএলের ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদসহ শীর্ষ তিন স্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করেছে। তাদের সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা এবং নতুন এমডি, ডিএমডি, কোম্পানিসচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আইএলএফএসএল। ইতিমধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্তও সংগ্রহ করা হয়েছে।

ভুয়া ও কাগুজে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৫১ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন ও আত্মসাতের অভিযোগে সম্প্রতি পি কে হালদারসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করেছে দুদক। মামলায় অভিযুক্তরা সবাই নিজ নিজ পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

জানতে চাইলে আইএলএফএসএলের চেয়ারম্যানের নজরুল ইসলাম খান গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের যে চিঠি এসেছে, আমরা তা পরিপালন করব। তবে সমস্যা হলো, কাকে দায়িত্ব দেব। তিন স্তর পর্যন্ত সবার নামেই একই অভিযোগ, মামলাও হয়েছে। এখন চেষ্টা চলছে নতুন লোকবল নিয়োগের।’

ভুয়া ও কাগুজে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৫১ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন ও আত্মসাতের অভিযোগে সম্প্রতি পি কে হালদারসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করেছে দুদক। মামলায় অভিযুক্তরা সবাই নিজ নিজ পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এর মধ্যে পরিচালকেরা হলেন এম এ হাশেম, আনোয়ারুল কবীর, মো. নুরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, মো. নুরুজ্জামান, জহিরুল আলম, নওশেরুল ইসলাম, বাসুদেব ব্যানার্জি, পাপিয়া ব্যানার্জি ও মিজানুর রহমান। কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই, অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আল মামুন সোহাগ, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী, কোম্পানি সচিব রফিকুল ইসলাম খান।

আরও পড়ুন

অভিযুক্তদের এখনো বহাল থাকা প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাইকে সরিয়ে দিতে গেলে পিয়ন ছাড়া কেউ থাকবে না। তবে পরিকল্পনা রয়েছে। পরিচালকদের কাছ থেকে বন্ড নিয়ে তাঁদের সরিয়ে দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু কেউ বন্ড দিতে রাজি হচ্ছেন না।’

আইএলএফএসএল আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পারার পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ১ জুন আদালত সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন। দায়িত্ব নিয়ে তিনি ঋণ আদায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। ছোট আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দেওয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ কোটি টাকা নগদ আদায় হয়েছে। এর বিপরীতে বড় অঙ্কের ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়। ফলে খেলাপি ঋণ ৯৪ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৭৫ শতাংশ।

নজরুল ইসলাম খান এ নিয়ে বলেন, ‘এখন আর এত কিছু দেখা সম্ভব না। টাকা আদায়ে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সমস্যা হলো যাঁদের নামে ঋণ, তাঁদের ব্যাংক হিসাবও দুদক বন্ধ করে রেখেছে। এ নিয়ে দুদকের সঙ্গেও কথা হয়েছে।’

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ২০১৯ সাল শেষে আমানত ছিল ২ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। ঋণ ছিল ৩ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ২ হাজার ৮০২ কোটি টাকা লোকসান দেয়। এর আগে ২০১৮ সালে সর্বশেষ ১১ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল আইএলএফএসএল।

আরও পড়ুন