করপোরেটদের ব্যাংকিংয়ে আনা নিয়ে ভারতে সমালোচনা

ভারতে বড় করপোরেটদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) একটি কমিটি, যার কড়া সমালোচনা করেছেন সাবেক আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন। এরপর ভারতে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এটিকে হাতিয়ার করে সরকারের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমসূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।

ভারতে ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত খুব কড়া। বলা যায়, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠার রাস্তা বন্ধ। কিন্তু সম্প্রতি করপোরেটদের ব্যাংকিং খাতে প্রবেশের অনুমতি দিতে সুপারিশ করেছে দেশটির শীর্ষ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কমিটি। সেই সুপারিশের তীব্র সমালোচনা করেছেন রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন এবং সাবেক ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য। তারপরই আক্রমণের ঝাঁজ বেড়েছে বিরোধীদের।

মোদি সরকারকে ‘স্যুট-বুটের সরকার’ তকমা দিয়ে গোড়া থেকেই রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, বড় করপোরেট সংস্থার ঋণ মওকুফের টাকা জোগাড় করতেই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। করোনাকালে দরিদ্রদের হাতে সেভাবে নগদ অর্থ তুলে দেওয়া না হলেও বিপুল কর ছাঁটাইয়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে শিল্পপতিদের। এ নিয়ে যথারীতি টুইট করেছেন রাহুল গান্ধী: ‘ঘটনাপরম্পরা মন দিয়ে বুঝুন। প্রথমে বিপুল অঙ্কের ঋণ মওকুফ করা হলো বড় করপোরেটদের। তারপরে দেওয়া হলো (করপোরেট) কর ছাঁটাইয়ের সুবিধা। আর এবার সাধারণ মানুষের সঞ্চিত অর্থ ওই সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকে জমা করার ব্যবস্থা হচ্ছে।’

বিজেপিও কম যাচ্ছে না। তারা পাল্টা কটাক্ষ করে বলছে, একের পর এক নির্বাচনে হার, কপিল সিব্বল থেকে গুলাম নবী আজাদ—দলের নেতৃত্বের ওপরে আস্থা খুইয়ে মুখ খুলছেন প্রবীণ নেতারা। সমালোচনার তির রাহুল গান্ধীর দিকেই।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ঘটনাপরম্পরা বোঝার সময় এসেছে রাহুল গান্ধীর। রিজার্ভ ব্যাংকের কমিটির সুপারিশে সরকারের ভূমিকা কোথায়, কৌশলে সেই প্রশ্নও ছেড়ে দিচ্ছে সরকারি সূত্র। কিন্তু ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের অভিযোগ, খাতায়-কলমে সুপারিশ শীর্ষ ব্যাংকের হলেও এই উদ্যোগ মূলত নরেন্দ্র মোদির। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে যেমন রিজার্ভ ব্যাংকের সায় ছিল না, তেমন এ ক্ষেত্রেও ঘনিষ্ঠ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থসিদ্ধির জন্য শীর্ষ ব্যাংককে সামনে রেখে এই রাস্তা খুলে দিতে চাইছেন মোদি। তাঁর কথায়, ‘শেষ পর্যন্ত করপোরেটদের ব্যাংক খোলার লাইসেন্স দেওয়া হলে সবার আগে কারা সেটা পাবে, সেটা সবাই জানে।’ অর্থাৎ নাম না করেও তাঁর নিশানা রিলায়েন্সের কর্ণধার মুকেশ আম্বানি ও আদানি গোষ্ঠীর গৌতম আদানিরা, সেটা বলা বাহুল্য।

লাখ লাখ কোটি টাকা ধার শোধ করেননি মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিরা। ব্যাংকিংয়ে করপোরেটরা আসলে লুট হবে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়
সীতারাম ইয়েচুরির, সিপিএম নেতা

কেন তিনি এবং তাঁর দল ব্যাঙ্কের চাবি কর্পোরেটের হাতে দেওয়ার বিরোধী, সে বিষয়ে চিদম্বরমের দাবি, ‘পৃথিবীর সর্বত্র ব্যাংকের মালিকানা বা অংশীদারি যত বেশি সম্ভব তত লোকের হাতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত না হয়। মালিকানা ও পরিচালনার মধ্যে থাকে বড় দূরত্ব, যাতে সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা থাকে। আর নিশ্চিত করা হয়, ঋণদাতা ও গ্রহীতা যেন একই প্রতিষ্ঠান না হয়।’ ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে কর্পোরেট সংস্থা ঢুকলে তিনটি রক্ষাকবচই নষ্ট হবে বলে তাঁর আশঙ্কা।

সম্প্রতি বেকায়দায় পড়া ইয়েস ব্যাংক, লক্ষ্মী বিলাস ব্যাংক ইত্যাদিকে বাঁচাতে যে ভাবে সরকারকে এগিয়ে আসতে হয়েছে, সেই উদাহরণ টেনে সাবেক অর্থমন্ত্রী জানান, রাজন ও আচার্যের বিরোধিতার তিনি পূর্ণ সমর্থক।

এ প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির টুইট, ‘লাখ লাখ কোটি টাকা ধার শোধ করেননি মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিরা। ব্যাংকিংয়ে করপোরেটরা আসলে লুট হবে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়।’