কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে ৯%

শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বন্ধ রেখে আদায়ে জোর দিয়েছে। পাশাপাশি নতুন কৃষক খুঁজে ঋণ দিচ্ছে। প্রবাসী আয় সংগ্রহেও মনোযোগ দিয়েছে।

বড় শিল্পে ঋণ দিয়ে খেলাপির জালে আটকা পড়েছিল রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। তবে এখন কৃষকদের ঋণ দিয়ে আবার মূল লক্ষ্যে ফিরে আসছে ব্যাংকটি। আগে নেননি এমন কৃষক খুঁজে ঋণ দিচ্ছে। নতুন আমানত ও প্রবাসী আয় সংগ্রহে জোর দিয়েছে।

বিকেবি শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বন্ধ রেখে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করেছে। এর ফলে কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কমে ইতিমধ্যে এক অঙ্কে অর্থাৎ ৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ২৮ শতাংশ।

কৃষি ব্যাংকের বেশির ভাগ শাখাই গ্রামে। আর অধিকাংশ প্রবাসীও গ্রামের। সে জন্য ব্যাংকটি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় সংগ্রহে মনোযোগ দিয়েছে। ইতিমধ্যে মানিগ্রাম, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, রিয়া, এক্সপ্রেস মানি, ট্রান্স ফাস্টের মতো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। সে জন্য অনেক প্রবাসী এখন বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠাতে বিকেবিকে বেছে নিচ্ছেন। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৩ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসেছিল ১ হাজার ৭ কোটি টাকার প্রবাসী আয়। ১ হাজার ৩৮টি শাখার সব কটি ইতিমধ্যে অনলাইনের আওতায় আসাটাও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির একটি বড় কারণ।

জানতে চাইলে বিকেবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ‘কৃষি ব্যাংককে একটা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করছি। আগে ঋণ নেননি এমন কৃষক খুঁজে ঋণ দিয়েছি। আবার নতুন নতুন আমানতকারী পেয়েছি। যেসব ঋণ দীর্ঘদিন আদায় হয়নি, তা আদায়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

কৃষি ব্যাংক শুরু থেকে কৃষি ঋণ দিলেও ২০১০ সালের পর হঠাৎ পোশাকশিল্পে ঋণ দেওয়া শুরু করে। তা সাময়িকভাবে সুফল দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে সুখকর হয়নি। কারণ, অল্প সময়েই প্রচুর ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। ফলে ২০১৬ সালে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ৪ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৮ শতাংশ। তাই ব্যাংকটি শিল্পে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে আদায়ে জোর দেয়।

তবে বিকেবি এখনই মুনাফার মুখ দেখছে না। কারণ, ব্যাংকটির তহবিল ব্যয় এখনো ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে ছিল ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর কৃষি ঋণের সুদহার ৮ শতাংশ।

জানা গেছে, বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে ব্যাংকটি গত চার অর্থবছরে প্রায় ১৬ লাখ নতুন আমানতকারী পেয়েছে। এর ফলে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। গত জুন শেষে ব্যাংকটিতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। আর আমানতকারী বেড়ে হয় ৯২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬৬ জন।

আগে ঋণ নেননি এমন কৃষকদের গুরুত্ব দেওয়ায় তিন বছরে ৬ লাখ ২৫ হাজার ৬৫০ জন নতুন ঋণগ্রহীতা তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যাংকটির ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ লাখ ১৭ হাজার ৯৮১।

২০১৭ সাল শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৪ শতাংশ। গত জুনে খেলাপি ঋণ কমে হয়েছে ২ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ শতাংশ।

বিকেবির এমডি আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, এখন যা খেলাপি ঋণ রয়েছে, তার অর্ধেকই শিল্প খাতে। এসব ঋণ আদায় করা বেশ কঠিন। কারণ, ঋণগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হয়নি। বাকি ঋণ কৃষকদের নেওয়া, যা আদায়ের চেষ্টা চলছে।

করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের দেওয়া আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ব্যাংকটি ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪১৭ জন কৃষককে ৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

সব মিলিয়ে কৃষি ব্যাংক লক্ষ্যের দিকে ফিরছে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।