কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএফআইইউর অধিক তৎপর হওয়া দরকার

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণে ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন।

বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) আরও তৎপর হওয়া দরকার। কারণ, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনও পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক ব্যবসার ওপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বৈঠকে এ কথা বলা হয়।

পেমেন্ট গেটওয়েগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিবন্ধন নেওয়া সব ব্যাংক, মোবাইলে সেবাদাতা (এমএফএস) কোম্পানি এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) ও পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও)।

বৈঠকে অংশ নেওয়া সূত্রগুলো জানায়, কিছু কোম্পানির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বৈঠকে। বলা হয়, বর্তমানে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে কোনো ই-কমার্স কোম্পানির নিবন্ধন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই বলে এগুলোকে তদারকির আওতায় আনা যাচ্ছে না।

সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লেনদেন আগে থেকেই সন্দেহজনক ছিল, যা বাংলাদেশ ব্যাংক এড়িয়ে গেছে। আলোচিত-সমালোচিত কোম্পানি ইভ্যালি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তখনো বাংলাদেশ ব্যাংক তৎপর না হয়ে তা অন্তত ছয় মাস ফেলে রাখে।

ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, বিএফআইইউর ভারপ্রাপ্ত প্রধান মাসুদ বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বলা হয়, পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে কিছু পিএসও, পিএসপি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন না নিয়েই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করে আসছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থামাচ্ছিল না তাদের। অন্য দিকে বিএফআইইউ এক মাসের জন্য ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখলেও পরে আর স্থগিতাদেশ বাড়ায়নি। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায় তাদের হিসাব। সে জন্য বৈঠকে বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তোলা হয়।

গত রাতে মুঠোফোনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককেও দায়ী করা চলে না। সরকারের অন্য দপ্তর যখনই কিছু জানিয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করেছি।’

গ্রাহক সুরক্ষায় নতুন কমিটি

ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত মঙ্গলবার ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির আওতায় আনা ও কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক ব্যবসার কারণে যেসব ভোক্তা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের অধিকার সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণ করবে এই কমিটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এই কমিটির প্রধান। কমিটির সদস্যসচিব হবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব। কমিটি এক মাসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের তথ্য, সম্পদের বিবরণ, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি এবং অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারের পদ্ধতি নির্ণয়; ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ; ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের আর্থিক লেনদেনকে তদারকি এবং এগুলোকে করের আওতায় আনা।

কমিটির সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটির সদস্যদের নাম পাঠাতে সব দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রতিবেদন পাঠাতে পারব বলে আশা করছি।’