জনতাও লাখ কোটি টাকার ক্লাবে

সোনালী ব্যাংকের পর ইসলামী ও অগ্রণী ব্যাংকের আমানত লাখ কোটি টাকা ছাড়ায়। এবার জনতা ব্যাংকও এই এলিট ক্লাবে ঢুকল।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের আমানত এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের জমানো টাকা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রাখা আমানতে নতুন এই মাইলফলক ছুঁয়েছে ব্যাংকটি। এর ফলে সরকারি-বেসরকারি অন্য তিন ব্যাংকের মতো জনতাও এখন আমানতের দিক থেকে লাখ কোটি টাকার এলিট ক্লাবে প্রবেশ করল। তবে এ জন্য ব্যাংকটি আমানত সংগ্রহে আগ্রাসী হয়নি, উচ্চ হারে সুদও দেয়নি।

যেসব ব্যাংক যত দ্রুত প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছেছে, তারাই তত তাড়াতাড়ি আমানতে নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে। এ লক্ষ্যে বিশেষ করে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপশাখা খোলার মতো সেবা বেছে নিয়েছে। আর সরকারি ব্যাংকগুলো এখনো সেবা দিতে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা শাখার ওপরই নির্ভর করছে।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের আমানত ২০১৬ সালেই এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০২০ সালের জুনে এক লাখ কোটি টাকার আমানতের ক্লাবে প্রবেশ করে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। চলতি বছরের জুনে এই ক্লাবে ঢুকে রাষ্ট্র খাতের অগ্রণী ব্যাংক। আর গত ২৩ সেপ্টেম্বর জনতা ব্যাংকের আমানত বেড়ে ১ লাখ ৩৪৮ কোটি টাকায় ওঠে। তা গত মঙ্গলবার বেড়ে হয় ১ লাখ ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। এর ৩০ শতাংশই সরকারি খাতের আমানত। বর্তমানে এই ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৬৮ হাজার ৩২৮ কোটি টাকায় উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুব শিগগির অন্য কোনো ব্যাংকের আমানত এক লাখ কোটি টাকায় ওঠার সম্ভাবনা নেই। কারণ, বর্তমানে অল্প কয়েকটি ব্যাংকের আমানত ৫০ হাজার কোটি টাকার আশপাশে রয়েছে, বাকিগুলোর আরও কম।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ব্যাংকস অর্ডার ১৯৭২ জারির মাধ্যমে তৎকালীন দি ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড ও দি ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড একীভূত করে জনতা ব্যাংক গঠন করা হয়। ওই বছরে জনতা ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫৭ কোটি টাকা, আর ঋণ ছিল ১১৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকটির আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৯৮ কোটি ও ৭০ কোটি টাকা। সেই বছরে ব্যাংকটি ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার পরিচালন মুনাফা ও ৬৬ লাখ টাকার নিট মুনাফা করে। তখন এই ব্যাংকের শাখা ছিল ২৬১টি আর জনবল ছিল ৩ হাজার ৪০৮ জন।

২০২০ সালের শেষে জনতা ব্যাংকের আমানত ৮২ হাজার ৪০১ কোটি টাকায় ও ঋণ ৬০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তখন ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা, যার বড় অংশ অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির শাখা ছিল ৯১৬ ও জনবল ১১ হাজার ৪৮৩ জন।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একসময় জনতা ব্যাংক শিল্প খাত ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র ছিল। ব্যাংকটির হাত ধরে দেশে অনেক শিল্পোদ্যোক্তা তৈরি হয়েছেন। দেশের প্রায় সব করপোরেট গ্রুপেই জনতা ব্যাংকের অর্থায়ন ছিল। আর বৈদেশিক বাণিজ্য বলতেই যেন ছিল জনতা ব্যাংক। কিন্তু ২০১৫ সালের প্রাক্কালে ব্যাংকটির করুণ আর্থিক পরিস্থিতি প্রকাশ হতে শুরু করে। ওই সময়ে বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও পরবর্তী সময়ে ক্রিসেন্ট ও অ্যাননটেক্সের অনিয়মের চিত্র প্রকাশিত হয়। এতে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তবে এতে ব্যাংকটির আমানতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, বরং তা বেড়েছে।

আমানত লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমানতের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটিনি। বেশি সুদেও আমানত সংগ্রহ করিনি। যা এসেছে, তার পুরোটাই সাধারণ গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের। এখন ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ঠিক করতে আমরা চেষ্টা করছি। যথাযথ বিবেচনা ছাড়া কোনো ঋণ দিচ্ছি না। অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট ঠিক হলে ব্যাংকের বড় কোনো সমস্যা থাকবে না।’