তরুণ উদ্যোক্তারা খুব বেশি ব্যাংকিং সুবিধা পান না

খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্যের অতীত ও বর্তমান নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তরুণ উদ্যোক্তা ও ইউরো অ্যাগ্রোভেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উত্তম মণ্ডল, খুলনা

আবু বকর সিদ্দিক

প্রশ্ন :

একসময়ের শিল্পাঞ্চল খুলনা কেন এখন ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে পিছিয়ে পড়ল বলে মনে করেন?

আবু বকর সিদ্দিক: বিগত দিনগুলোতে খুলনা নিয়ে চিন্তা করার মতো মানুষ ও মানসিকতার বেশ ঘাটতি ছিল। সরকার পরিচালনায় যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও সেটি হয়নি। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যাঁরা ছিলেন, খুলনার প্রতি তাঁদের নজর বলতে গেলে খুবই কম ছিল। এ কারণে একসময়ের খুলনা ও খালিশপুরের বৃহত্তম শিল্পনগর আস্তে আস্তে মৃত্যুপুরী হয়ে গেল। তবে বর্তমান সরকারের খুলনার দিকে নজর আছে। তাই খুলনা নিয়ে এখন আমরা বেশ আশাবাদী।

প্রশ্ন :

খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ এখন কেমন?

আবু বকর সিদ্দিক: খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতির ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল অনুন্নত যোগাযোগ। যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে অনেকে খুলনায় শিল্পকারখানা স্থাপনে হয়তো খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। এ কারণে এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের খুব বেশি উন্নতি হয়নি। খুলনার বাইরে যেভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে, খুলনায় সেভাবে হয়নি। তবে মোংলা বন্দরের কাজের গতি বেড়েছে। খুলনা ও মোংলা রেলপথ তৈরি হচ্ছে, পদ্মা সেতু হচ্ছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের অনেক উন্নতি হবে। পরিবেশ উন্নত হলে ব্যবসা-বাণিজ্যও অনেক এগিয়ে যাবে।

তরুণদের ব্যবসায় আকৃষ্ট করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ব্যবসায়িক নানা কাজ সহজ করতে হবে।
আবু বকর সিদ্দিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউরো অ্যাগ্রোভেট

প্রশ্ন :

খুলনার তরুণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বর্তমানে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?

আবু বকর সিদ্দিক: সবার আগে তরুণ উদ্যোক্তাদের দরকার যথাযথ গাইডলাইন। কিন্তু সেটির অভাব রয়েছে। খুলনায় তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেটুকু এগিয়ে আসছেন, সেটা পুরোটা ব্যক্তি উদ্যোগে। এই এলাকার তরুণদের ব্যবসায়িক সচেতনতা কম। তাঁদের মধ্যে ব্যবসা করার আগ্রহও কম। তরুণদের ব্যবসায় আকৃষ্ট করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ব্যবসায়িকসহ নানা কাজ সহজ করতে হবে। খুলনায় খুব বেশি বড় ও ভালো ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি নেই, যার কারণে কাউকে দেখে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুযোগও কম। এ ছাড়া খুলনায় খুব বেশি ব্যাংকিং সুবিধা পান না তরুণ উদ্যোক্তারা। দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামে একটি ব্যাংকের শাখায় হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। অথচ খুলনায় ব্যাংকিং লেনদেনের পরিমাণ খুব কম। তরুণ উদ্যোক্তারা যে ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা চান, তাঁরা সেটি পাচ্ছেন না।

প্রশ্ন :

আপনি কি মনে করেন, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে?

আবু বকর সিদ্দিক: পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে আমরা অনেক আশাবাদী। আশা করছি, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এ জন্য খুলনা শহরকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে এখন থেকেই। বর্তমানে যা হচ্ছে, তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। তাই পদ্মা সেতুর সুফল কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজনে এ এলাকার বাইরের মানুষের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। খুলনায় বিদেশি বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। সেটা কাজে লাগাতে হবে। পদ্মা সেতুর সব ধরনের সুফল নিয়ে খুলনা যাতে শিল্প এলাকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে পারে, সে জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।