নতুন চেয়ারম্যান কী করবেন

আবুল হাসেম

সরকারি হলেও বেসিক ব্যাংক ছিল দেশের ভালো ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। কিন্তু ২০০৯–১৪ সাল পর্যন্ত শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালে ব্যাংকটিকে প্রায় ধ্বংসের কিনারে নিয়ে যান। বহুল আলোচিত এই ব্যক্তির বিদায়ের পরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলাউদ্দিন এ মজিদ। তাঁর মেয়াদ শেষ হয় গত ২৭ জুলাই। তাঁর জায়গায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবুল হাসেমকে।

আলাউদ্দিন মজিদ ছয় বছরেও (২০১৪–২০) যেখানে বেসিক ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারেননি, সেখানে নতুন চেয়ারম্যান কী করতে পারেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে আবুল হাসেমকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বেসিক ব্যাংকের এমডি রফিকুল আলমকে গতকাল সোমবার চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আবুল হাসেম বর্তমানে আনোয়ার খান মডার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ, অর্থাৎ ৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকাই খেলাপি। ২০১৯ সালে ব্যাংকটি ৩২৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে। অথচ ২০০৯ সালে শেখ আবদুল হাই দায়িত্ব নেওয়ার আগে ব্যাংকটি প্রতিবছর গড়ে ৫০ কোটি টাকা মুনাফা করে আসছিল।

শেখ আবদুল হাই চেয়ারম্যান থাকাকালে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে বেসিক ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়। এর বড় অংশই এখন প্রায় আদায়ের অযোগ্য। জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাঁচ ডজন মামলা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অনিয়ম-জালিয়াতির সঙ্গে আবদুল হাইসহ পর্ষদ সদস্যদের জড়িত থাকার চিত্র উঠে আসছে। রহস্যজনক কারণে তাঁদের ব্যাপারে দুদকের অনুসন্ধানই শেষ হচ্ছে না।

আবদুল হাইয়ের আমলে জামানত হিসেবে ভুয়া সম্পত্তি, জামানতের ত্রুটিপূর্ণ মালিকানা, হালনাগাদ ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) রিপোর্ট ও ক্রেডিট রেটিং রিপোর্ট গ্রহণ না করা, ছলচাতুরীর মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় অর্থ গ্রহণ এবং নিয়ম লঙ্ঘন করে ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বেসিক ব্যাংকের পর্ষদে সব সময়ই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন। কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতির কথা জেনেও তাঁরা চুপ থাকতেন। তবে এম আসলাম আলম আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব থাকার সময় তৎকালীন পরিচালক রেজাউর রহমান ব্যাংকের ভয়ংকর সব চিত্র তুলে ধরে সচিবকে তিন পাতার চিঠি লিখেছিলেন। এর পর তিনি বেসিক ব্যাংকে ঢুকতে পারেননি।

আলাউদ্দিন এ মজিদ বিদায়ের পর এক সাক্ষাৎকারে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ব্যাংকটিতে ডাকাতি হয়েছে। নতুন উদ্যোগ প্রয়োজন। নিশ্চয়ই নতুন কেউ দায়িত্ব নিয়ে সেই পথে যাবেন।

নতুন একজন দায়িত্বে এলেন ব্যাংকটিতে। তিনি আবুল হাসেম, যিনি ২০১০–১৭ পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক এবং ২০১৭ সাল থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।

গত রাতে প্রথম আলোকে আবুল হাসেম বলেন, ‘যোগ দেওয়ার পর বলা যাবে, ব্যাংকটির উন্নতিকল্পে কী করা যায়।’