নির্দেশনা না মানায় নতুন করে আরও দুই ব্যাংককে জরিমানা

শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিটি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শর্ত ছিল, এই টাকায় এমন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা যাবে, যারা পরপর তিন বছর ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে সরকারি-বেসরকারি ছয় ব্যাংক এমন সব কোম্পানির শেয়ার কেনে, যারা টানা তিন বছর ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়নি। এর মধ্যে বারবার শর্ত লঙ্ঘন করা দুই ব্যাংককে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর প্রথমবার ভুলের কারণে সতর্ক করেছে চার ব্যাংককে।

জরিমানার মুখে পড়া ব্যাংক দুটি হলো ইসলামি ধারার এক্সিম ও প্রচলিত ধারার প্রিমিয়ার ব্যাংক। যে চার ব্যাংককে সতর্ক করা হয় সেগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী এবং বেসরকারি খাতের ইস্টার্ণ, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল)। এর মধ্যে ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী একই গ্রুপের ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোকে জরিমানা ও সতর্ক করে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেয়ারবাজার স্বাভাবিক করতে প্রতিটি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় এবং শেয়ারবাজারের এই বিনিয়োগকে আইনের নির্ধারিত সীমার বাইরে রাখে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই তহবিলের বিপরীতে পুনঃ অর্থায়নের সুযোগ দেয়। ব্যাংক নিজে বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই তহবিল ব্যবহারের সুযোগ পায়। তবে কোন শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে, সেই শর্ত ঠিক করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ছয়টি ব্যাংক এই শর্ত ভেঙে বিনিয়োগ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক দুই ব্যাংককে জরিমানা ও চার ব্যাংককে সতর্ক করার পাশাপাশি বলে দিয়েছে, পরবর্তী সময়ে এমন ঘটলে শুধু জরিমানা নয়, তহবিল বাতিল করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আর প্রিমিয়ার ব্যাংক এক লিখিত বক্তব্যে জানায়, প্রিমিয়ার ব্যাংক সব নিয়মকানুন মেনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। তিন বছর ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়নি, বিশেষ তহবিলের অর্থে এমন অল্প কিছু শেয়ার কেনা হয়। কিন্তু ধরা পড়ার পরই তা বিক্রি করে দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, শেয়ারবাজারের উত্থানের সঙ্গে ব্যাংকের অর্থ জড়িত। গ্রাহকের আমানতের টাকা শেয়ারবাজারে যাচ্ছে। তাই আমানত সুরক্ষিত রাখতে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক ও জরিমানা করা হচ্ছে।

এর আগে আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার কেনায় প্রবাসী উদ্যোগে গঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংককে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও এনআরবি ব্যাংককে ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল নতুন রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। এদিন সূচকটি ২৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩২৯ পয়েন্টে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।