ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য

গত বুধবার প্রথম আলোর ১ম পাতায় ‘ন্যাশনাল ব্যাংক ঋণ দিতে পারবে না’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটির জনসংযোগ কর্মকর্তা রুহিন হোসেন স্বাক্ষরিত প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘প্রকাশিত সংবাদটি উদ্দেশ্যমূলক এবং বাস্তবতাবিবর্জিত, যা ব্যাংক, সম্মানিত শেয়ারহোল্ডার এবং সিকদার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার একটি অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বিষয়ে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

প্রতিবাদপত্রে আরও বলা হয়েছে, এর আগে গত ১৮ এপ্রিল ন্যাশনাল ব্যাংক এবং সিকদার পরিবার নিয়ে মনগড়া ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশ করে পত্রিকাটি। ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে যার প্রতিবাদ করা হয় তাৎক্ষণিকভাবে। পরবর্তী সময়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের ব্যাপারটি অস্বীকার করে ব্যাংকের তিনজন পরিচালকের পক্ষ থেকে একটি স্বাক্ষরিত বিবৃতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের সহধর্মিণী মনোয়ারা সিকদার বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন সূচকে ন্যাশনাল ব্যাংকের সাফল্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বেশ ইতিবাচক, যা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর এবং উপাত্তহীন প্রচারণার দ্বারা ব্যাহত হতে পারে। প্রথম আলো পত্রিকার বারবার এরূপ সংবাদ জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির পাশাপাশি ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ধরনের ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। ভবিষ্যতে ন্যাশনাল ব্যাংকের মতো বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর নেতিবাচক তথ্য প্রচার না করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। প্রতিবেদনে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা নিয়ে যে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কারণ, উল্লেখিত তারিখে ব্যাংকের কোনো পর্ষদ সভাই অনুষ্ঠিত হয়নি।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: ব্যাংকটি প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার চিঠি দিয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা–ই প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্দেশনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

আমরা প্রতিবেদনে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেছি। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক মাস ধরেই ন্যাশনাল ব্যাংকের নানা অনিয়ম নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে একাধিক চিঠি দিয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে, নিয়োগ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। প্রথম আলো কেবল সেসব চিঠি ও নির্দেশনা ধরেই সংবাদ প্রকাশ করেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ন্যাশনাল ব্যাংক সেসব নির্দেশনা মেনে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। যেমন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ।

গত বুধবারের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এ নিয়ে সিকদার পরিবার ও ব্যাংকটির পরিচালকদের মধ্যে বিভক্তি প্রকট হয় গত ১২ ফেব্রুয়ারির পরিচালনা পর্ষদে।’ ভুলবশত ১২ ফেব্রুয়ারির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে পর্ষদ সভা হয়েছিল ১২ এপ্রিল। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।

প্রতিবেদনে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তার সব তথ্য-উপাত্ত প্রথম আলোর সংরক্ষণে রয়েছে। এতে ব্যক্তিগত কোনো মতামত প্রকাশ করা হয়নি। প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যমূলক এবং বাস্তবতাবিবর্জিতও নয়। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রথম আলো তথ্য-উপাত্তভিত্তিক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।