করোনার মধ্যেও চাঙা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা

করোনাকালে আস্থা বেড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। আর বাড়ির কাছাকাছি স্থানে সেবা পাওয়ায় এজেন্টরা হয়ে উঠছেন ব্যাংকিং সেবার অন্যতম মাধ্যম।

করোনাকালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা বেড়েছে
ছবি: সংগৃহীত

পড়াশোনা শেষে কিছুদিন চাকরি খোঁজার পর ইস্তফা দেন। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তাই সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার এজেন্ট হয়ে যান ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার জাবের শেখ। পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিন মাসের মাথায় মুনাফার দেখা পান এই তরুণ। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানে তিনজনের কর্মসংস্থানও হয়েছে।

২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর জাবের শেখের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। গত ১১ মাসে ৫৮৫টি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। মাসে ২৭ থেকে ৩২ জনের প্রবাসী আয় আসে, সুবিধাভোগীরা তা উত্তোলন করেন। গত ডিসেম্বরে এক মাসে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। এতে ভালো মুনাফাও হয়েছে তাঁর।

জাবের শেখ গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে যখন বাজারে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখা খোলা হলো, তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে চাননি। কয়েক মাস পর শাখাটি থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। সবাইকে সময় নিয়ে বোঝাতে হয়েছে। যাঁরা শুরুতে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদের একজন এখন আমার গ্রাহক। সিটি ব্যাংকের পর আমাদের এখানে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হওয়ায় মানুষের কাছ থেকে এখন বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।’

করোনাকালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা বেড়েছে বলে জানালেন এই উদ্যোক্তা। করোনার আগে গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁর মাসিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি টাকা। কিন্তু মার্চে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে গত এপ্রিল-মে মাসে লেনদেন বেড়ে ৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

আরও পড়ুন

করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরুর দিকে বন্ধ ছিল কিছু ব্যাংকের শাখা। আবার সীমিত করা হয়েছিল লেনদেনও। কিন্তু এক দিনের জন্যও বন্ধ ছিল না এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। অনেক এজেন্ট গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়েও সেবা দিয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। আর বাড়ির কাছে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়ায় এজেন্টরা হয়ে উঠছেন ব্যাংকিং সেবার অন্যতম মাধ্যম। এতে ভালো ব্যবসাও করছেন এজেন্টরা।

করোনার মধ্যেও ভালো ব্যবসা করেছেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের নিত্যানন্দ দাশ। তিনি ২০১৭ সালে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট হয়েছিলেন। বর্তমানে তাঁর অধীনে প্রায় ৫ হাজার গ্রাহকের হিসাব রয়েছে। প্রতিদিন তিন–চার লাখ টাকার লেনদেন হয়। এই এজেন্ট পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন প্রবাসী আয় উত্তোলন করেন ছয়–সাতজন গ্রাহক।
নিত্যানন্দ বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ভাতা দিয়েছি আমরা। করোনাকালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই ভাতা বিতরণ করেছি। নতুন নতুন গ্রাহকের হিসাবও খুলেছি। সব মিলিয়ে করোনাকালে ব্যবসা ভালো হয়েছে।’

করোনার ছয় মাসে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় নতুন করে ১৭ লাখ গ্রাহক বেড়েছে।
ছবি: সংগৃহীত

করোনার ছয় মাসে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় নতুন করে ১৭ লাখ গ্রাহক বেড়েছে। তাঁদের মধ্যে নারী গ্রাহকের সংখ্যা ৮ লাখ। এই সময়ে আমানত বেড়েছে ৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪১৩ কোটি টাকার। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এজেন্টদের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যা বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় ভালো আয় হয়েছে এজেন্টদের। কারণ, প্রায় প্রতিটি সেবার বিপরীতে এজেন্টদের আয় আছে।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার এজেন্ট হিসেবে ২৭ মাস ধরে আছেন জাহাঙ্গীর হোসেন। বর্তমানে তাঁর অধীনে ব্যাংক হিসাব রয়েছে প্রায় ৫০০। প্রতি মাসে লেনদেন হয় ১ কোটি টাকার বেশি। প্রবাসী–অধ্যুষিত এলাকায় হওয়ায় প্রতিদিনই ৮-১০ জন গ্রাহক প্রবাসী আয় তুলতে এই এজেন্ট পয়েন্টে আসেন।
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, করোনার শুরুতে ব্যবসা কিছুটা খারাপ হলেও পরে বেড়েছে। সে কারণে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা বাড়ছে।