বেড়েছে গ্রাহক, কমেছে লেনদেন

  • করোনাভাইরাসের মধ্যে মানুষ যেমন ‘নতুন স্বাভাবিক’ জীবনে ফিরে এসেছে, মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএসের লেনদেনও আগের ধারায় ফিরে আসছে।

  • জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে লেনদেন কমেছে ৩৪ শতাংশ। আর সক্রিয় হিসাবও ৫ শতাংশ কমে গেছে।

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাইয়ে যেখানে এমএফএসের মাধ্যমে ১৬৯ কোটি টাকা প্রবাসী আয় বিতরণ হয়েছিল, আগস্টে তা নেমে এসেছে ১০৪ কোটি টাকায়।

করোনাভাইরাসের কারণে বিকাশ, রকেট, নগদ ও শিওর ক্যাশের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এতে বেড়ে গিয়েছিল এমএফএসে হিসাব খোলা ও লেনদেনের পরিমাণও। এখন করোনাভাইরাসের মধ্যে মানুষ যেমন ‘নতুন স্বাভাবিক’ জীবনে ফিরে এসেছে, এমএফএসের লেনদেনও আগের ধারায় ফিরে আসছে। এর ফলে জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে লেনদেন কমেছে ৩৪ শতাংশ। আর সক্রিয় হিসাবও ৫ শতাংশ কমে গেছে।

এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, কোরবানি ঈদের কারণে জুলাই মাসে লেনদেন বেশি হয়েছে। ওই মাসে প্রবাসী আয়ও ভালো এসেছে। আবার করোনায় কাজ হারানো মানুষদের জুলাই মাসে সরকারি ভাতাও দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে লেনদেন অনেক বেশি ছিল। কিন্তু আগস্টে এসে কেনাকাটা যেমন কমেছে, লেনদেনও তা–ই।

বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে আগস্টের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে লেনদেন ও সক্রিয় গ্রাহক কমে যাওয়ার চিত্র মিলছে। একইভাবে এমএফএসের মাধ্যমে প্রবাসী আয়, বেতন–ভাতা বিতরণ, সরকারি বেতন-ভাতা পরিশোধ—কেনাকাটা সবই কমেছে। তবে বেড়েছে নতুন গ্রাহক ও এজেন্টের সংখ্যা। একই সঙ্গে পরিষেবা মাশুল পরিশোধও বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ডাক বিভাগের সেবা নগদের তথ্য যুক্ত হয়নি।

প্রতীকী ছবি

দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হলো ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী বিকাশ। জুনের চেয়ে জুলাইয়ে বিকাশের লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছিল। জুনে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ৩৩ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা, জুলাইয়ে তা বেড়ে ৪৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। আগস্টে তা কমে নেমে আসে ৩১ হাজার ৯১৯ কোটি টাকায়।

জানতে চাইলে বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই মাসে ঈদুল আজহার কারণে লেনদেন অনেক বেশি হয়েছিল। আগস্ট মাসে যা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতে সরকারি প্রণোদনার আওতায় বেতন বিতরণে ব্যাংক ও এমএফএসের ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকায় জুলাই মাসের লেনদেনের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যায়। আগস্ট মাসে এসে এই বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানই নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বেতন বিতরণ করেছে। ফলে তার প্রভাবও আগস্ট মাসের লেনদেনে পড়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। জুনে যা ছিল ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে লেনদেন বেড়েছিল ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে আগস্টে লেনদেন কমে হয়েছে ৪১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে লেনদেন কমেছে প্রায় ৩৪ শতাংশ।

জুলাইয়ে সরকারি ভাতা, বেতন-বোনাস, প্রবাসী আয়ের মতো অনেক ইভেন্ট ছিল। আগস্টে এসব নেই।
ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন

জানতে চাইলে রকেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ে সরকারি ভাতা, বেতন-বোনাস, প্রবাসী আয়ের মতো অনেক ইভেন্ট ছিল। আগস্টে এসব নেই। কেনাকাটাও কম। ফলে লেনদেন স্বাভাবিক ধারায় ফিরে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাইয়ে যেখানে এমএফএসের মাধ্যমে ১৬৯ কোটি টাকা প্রবাসী আয় বিতরণ হয়েছিল, আগস্টে তা নেমে এসেছে ১০৪ কোটি টাকায়। একইভাবে বেতন-ভাতা পরিশোধ ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা কমে হয়েছে ১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। কেনাকাটা ১ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা। আর সরকারি পরিশোধ ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। তবে গ্যাস, বিদ্যুতের মতো পরিষেবা বিল পরিশোধ ৮৭৮ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৯০৮ কোটি টাকা।

এখন গ্রাহকেরা ঘরে বসেই ডিজিটাল কেওয়াইসি (গ্রাহকসম্পর্কিত তথ্য) ফরম পূরণ করে সহজেই এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে হিসাব খুলতে পারছেন। রয়েছে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা স্থানান্তরের সুবিধাও। আবার বিভিন্ন পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মুঠোফোনে রিচার্জ এবং কাউকে টাকা পাঠানোসহ নানা লেনদেনও করা যাচ্ছে ঘরে বসে।