ব্যাংকে দক্ষ আইটি কর্মকর্তার অভাব আছে

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)

দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের সাইবার হামলা ঠেকানোর মতো দক্ষ কর্মকর্তার অভাব আছে। তাই ব্যাংকগুলোয় সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন স্তরবিশিষ্ট প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ লোকবল নিয়োগ করতে হবে।

রোববার অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) আয়োজিত ‘বিল্ডিং সাইবার রেজিলিয়েন্স ফর ব্যাংকস’ শীর্ষক দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকারদের মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি তথা নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে দেশের অর্ধশতাধিক ব্যাংকের ২০০ জন তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) কর্মকর্তা অংশ নেন।

সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। এতে তিনি বলেন, দেশের ৭২ শতাংশ ব্যাংকই মনে করে, সাইবার নিরাপত্তা দেওয়ার মতো অভিজ্ঞ লোকের অভাব আছে। ৯২ শতাংশ ব্যাংক মনে করে না যে ব্যাংক খাতের বাইরেও এ ধরনের অভিজ্ঞ লোক আছে। এদিকে গত দুই বছরে বাংলাদেশের ৬৮ শতাংশ ব্যাংক ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে বিপজ্জনকভাবে র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণও হয়েছে। এ ধরনের আক্রমণে ব্যাংকগুলো ব্যাপক তথ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকে।

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, সাইবার হামলার শিকার হলে ব্যাংকের নেটওয়ার্ক, আইটি ও হার্ডওয়্যার বিভাগগুলোর মধ্যে একটিকে আরেকটির দোষারোপ করার সংস্কৃতি আছে। তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানকে বরখাস্ত করার নজিরও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আরও বড় নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়ে যায়। যেহেতু প্রতিটি ব্যাংকের জন্য সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু এই বিভাগে তিন স্তরবিশিষ্ট লোকবল নিয়োগ দেওয়া উচিত, যাতে একজন চলে গেলে অন্যজন দায়িত্ব সামলে নিতে পারেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘করোনার মধ্যে ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের শক্তি দেখেছি। তবে প্রথাগত ব্যাংকিং থেকে প্রযুক্তিনির্ভর এই সেবায় চ্যালেঞ্জ বেশি। সুতরাং এই খাতে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের সাইবার নিরাপত্তাঝুঁকিতে না পড়ে। অবশ্য এ ধরনের বিনিয়োগ হতে হবে ভালোভাবে জেনেবুঝে।’

বৈশ্বিক অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেলেও বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত আছে বলে মনে করেন ফজলে কবির। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কমে ৪১ দশমিক ৭ বিলিয়ন হয়েছে। তবে আমি মনে করি না, এতে কোনো সমস্যা হবে। আমদানি-রপ্তানিসহ দেশের দেশের সার্বিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট রিজার্ভ আছে। তবে রিজার্ভের ওপর এর চেয়ে বাড়তি চাপ যেন না পড়ে, সে জন্য পরিকল্পনা মাফিক আগাতে হবে। এ ছাড়া রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ানোর তাগিদ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।’

এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের এই যুগে যেহেতু সাইবার অপরাধ বাড়ছে, তাই ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। হুমকির মাত্রা অধিক হওয়ায় আমরা মনে করি, ঝুঁকি মোকাবিলায় শক্তিশালী যৌথ উদ্যোগ ও জ্ঞান বিনিময় অপরিহার্য। আমরা আশা করি, দুই দিনের এই শীর্ষ সম্মেলনের পর অংশগ্রহণকারীরা সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হবেন এবং কর্মক্ষেত্রে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করবেন।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায়, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান, এক্সিম ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ হায়দার আলী এবং এবিবির সেক্রেটারি জেনারেল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডি খন্দকার রাশেদ মাকসুদ উপস্থিত ছিলেন।