ব্যাংকের আমানতও এখন গুলশান যাচ্ছে

রাজধানীর মতিঝিল ও ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকগুলোতে আমানত ক্রমান্বয়ে কমছে।

রাজধানীর গুলশান এখন অভিজাত, ধনী ও ব্যবসায়ীদের বড় আবাস। আবার বৃহৎ অনেক শিল্পগোষ্ঠীর ব্যবসায়িক ঠিকানাও গুলশান। এক–এক করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও স্থানান্তরিত হচ্ছে ওই এলাকায়। সেই সুবাদে গুলশান এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকগুলোতে আমানত দিন দিন বাড়ছে। তা শতকরা হিসাবে মোট আমানতের প্রায় ১১ শতাংশ।

তবে এখনো দেশের সবচেয়ে বেশি আমানত পুরোনো বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিল এলাকায়। আর মতিঝিল এলাকার ব্যাংকগুলোতে যে আমানত রয়েছে, তা পুরো চট্টগ্রাম জেলার চেয়ে বেশি। ব্যাংক আমানতের ৩৮ দশমিক ১৫ শতাংশই রয়েছে মতিঝিল, গুলশান ও চট্টগ্রাম জেলায়। আবার আমানতের প্রায় ২৫ শতাংশই গুলশান ও মতিঝিলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরভিত্তিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত দুই দশকে মতিঝিল ছেড়ে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলশানে চলে গেছে। এ প্রবণতা বেশি দেখা গেছে গত এক দশকে। একইভাবে অনেক ব্যবসায়ী ও ধনী ব্যক্তি ধানমন্ডি এলাকা ছেড়ে গুলশানের দিকে আবাস গড়েছেন। গত পাঁচ বছরে বেসরকারি খাতের শাহজালাল ইসলামী, ট্রাস্ট, ইস্টার্ণ, প্রাইম, যমুনা, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ঢাকা ও এবি—এই সাত ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় মতিঝিল থেকে গুলশানে স্থানান্তরিত হয়েছে। গুলশানে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নির্মাণকাজ চলছে। এসবেরই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মতিঝিল ও ধানমন্ডির আমানতে।

অফিসগুলো গুলশানে চলে এসেছে। গুলশান ও আশপাশের এলাকায় বসবাস ও বাণিজ্যিক কার্যালয় অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে আমানত মতিঝিল থেকে গুলশানমুখী হয়েছে।
আনিস এ খান, সাবেক চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)

এসব সম্পর্কে ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ‘অনেকগুলো ব্যাংক মতিঝিল ছেড়ে গুলশান এলাকায় চলে গেছে। আর বড় গ্রাহকেরা প্রধান কার্যালয়ের কাছাকাছি শাখায় লেনদেন করতে পছন্দ করেন। এতে তাঁরা কিছু সুবিধাও পান। আবার বড় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানও গুলশানে গেছে। ধানমন্ডিরও আগের সেই জৌলুশ এখন নেই। উচ্চবিত্তরা সবাই গুলশানে আবাস গড়েছেন। এ কারণেই গুলশান এলাকায় আমানত বাড়ছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর আমানতের ১৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল মতিঝিল এলাকায়। তা বিদায়ী ২০২০ সালের একই মাসে কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০১৫ সালে ধানমন্ডি এলাকার ব্যাংকে সার্বিক আমানতের অংশ ছিল ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা গত বছরে কমে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশে নেমেছে। ২০১৫ সালে রমনা এলাকায় আমানতের অংশ ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, যা গত বছরে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমে গেছে। অন্যদিকে ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পাঁচ বছরে গুলশান এলাকায় আমানতের অংশ ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে উঠেছে।

জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, অফিসগুলো গুলশানে চলে এসেছে। গুলশান ও আশপাশের এলাকায় বসবাস ও বাণিজ্যিক কার্যালয় অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে আমানত মতিঝিল থেকে গুলশানমুখী হয়েছে।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের মোট অ্যাকাউন্ট বা হিসাব সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৪৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৩। এ সংখ্যা ২০২০ সালের একই মাসে বেড়ে হয় ১১ কোটি ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৯।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোতে মোট আমানত ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ লাখ ১২ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা।

গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে মতিঝিলে আমানত ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। পুরো চট্টগ্রামের আমানত ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। আর গুলশানের আমানত ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। ফলে মোট আমানতের ৩৮ দশমিক ১৫ শতাংশই ছিল এ তিন এলাকায়। এর বাইরে ধানমন্ডি ও রমনা এলাকায় আমানতের পরিমাণ যথাক্রমে ৪০ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা এবং ৩৯ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

আর আমানত কম, এমন এলাকাগুলোরমধ্যে শীর্ষে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর। আমানতের পরিমাণ মাত্র ৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বরগুনার তালতলায় ৭ কোটি টাকা, বরিশালের কাজীরহাট এলাকায় ১১ কোটি টাকা, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির লামাইয়ে ১২ কোটি টাকা ও খাগড়াছড়ির গুইমারায় ১৪ কোটি টাকার আমানত রয়েছে।

এদিকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে শেষে ব্যাংকগুলোর মোট শাখা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬০৭, যা ২০১৯ সালের একই মাসে ছিল ১০ হাজার ৪০৭। ব্যাংক শাখার বেশির ভাগই ঢাকা ও চট্টগ্রামে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৫৮০ ও চট্টগ্রামে ২ হাজার ৫৪৯ শাখা।