ব্যাংকের ঋণ তদারকি আবার শুরু হচ্ছে

বাংলাদেশ ব্যাংক

করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনীতিকে টেনে তুলতে এখন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। কম সুদে দেওয়া এই ঋণের পুরোটাই যাচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। কিন্তু ঋণের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই দেখতে হবে। কারণ, বিতরণ করা ঋণের সঠিক ব্যবহার না হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। বেড়ে যেতে পারে জমি ও ফ্ল্যাটের দাম। তাই প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, প্রণোদনার ঋণের পাশাপাশি অন্য সব ঋণের বিষয়ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারিতে থাকবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রম কমে যাওয়ায় গত ছয় মাসে নতুন কোনো ঘটনায় কাউকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি।

অনিয়ম মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের এক আদেশে প্রধান কার্যালয় ও শাখা অফিসের পরিদর্শনসংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে আবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রয়োজনীয় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমানতকারীদের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তাই ঋণের যথাযথ ব্যবহার তদারকিতে রাখা আমাদের দায়িত্ব। এখন করোনার কারণে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের চাপও রয়েছে। উপযুক্ত গ্রাহকেরা ঋণ পাচ্ছেন কি না, তা তদারকি করা জরুরি। এ জন্য করোনার মধ্যেও পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে শাখা পর্যায়ে গিয়ে পরিদর্শন করতে পারবেন।’

আইন অনুযায়ী ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কমপক্ষে সাতটি বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা। এর বাইরে বিশেষ উদ্যোগে অন্য বিভাগগুলোও পরিদর্শন করতে পারে। এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাই এখন সব ধরনের বড় লেনদেন, ঋণ, ঋণপত্র, চেক ক্লিয়ারিং পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে বা বিতর্কিত কারও নামে দেওয়া বড় ঋণ–সুবিধাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কারণ, এই সময়ে নতুন কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারি হলে তা দেশের অর্থনীতির ওপর বড় চাপ তৈরি করবে।

আনিস এ খান আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নরের মধ্যে দুজন আছেন। ফলে কার্যক্রম এমনিতেই সীমিত হয়ে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি, অপারেশন বা পরিচালন ও পরিদর্শন কার্যক্রম পুরোদমে চলা উচিত। যাঁরা ব্যাংক পরিদর্শনে যান, তাঁদের পুরো ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের ফলেই হল–মার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা উদ্‌ঘাটন হয়েছিল। তবে সংস্থাটি এখন পরিদর্শনের বিষয়ে অনেকটাই উদাসীন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সংস্থা ২০১৭ সালে পরিদর্শন নীতিমালায় বড় পরিবর্তন আনে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ঋণ অপব্যবহারের চিত্র পেলেও তা আর শ্রেণীকৃত (খেলাপি) করতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট ঋণ খেলাপি করতে হলে তদারকি বিভাগের ডেপুটি গভর্নরকে অবহিত করতে হচ্ছে। কর্মকর্তারা চাইলেও কোনো প্রকল্প পরিদর্শন করতে পারছে না। সব মিলিয়ে সীমিত হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম।