শিগগির এজেন্টদের মাধ্যমে বিনিয়োগ চালু করা হবে

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা

ব্যাংকিং সেবাকে কম খরচে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। দেশে ২০১৪ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও ইসলামী ব্যাংক এ কার্যক্রম শুরু করে ২০১৭ সালে। খুব কম সময়ের মধ্যেই ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে যায় ৪৬২ উপজেলায়। দেশজুড়ে ২ হাজার ২৭৬ এজেন্ট এ সেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আহরণ ও আমানতের দিক থেকে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় লেনদেন সুবিধা প্রদান করছে, এতে গ্রাহকের আমানত থাকছে সুরক্ষিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ভূমিকা রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা।

সমতল-পাহাড়, হাওর, চরাঞ্চল, দ্বীপ এলাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় ব্যবসার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে প্রায় ১৪ হাজার যুবকের সরাসরি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট গ্রাহক ১ কোটি ৫৯ লাখ। যার মধ্যে সাড়ে ১৩ লাখ গ্রাহক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের। এসব গ্রাহক ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত জমা রেখেছেন। দেশের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট আমানতের ৩৫ শতাংশই ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের।

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২০ সালে ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ২৬১টি নতুন এজেন্ট আউটলেট চালু করেছে। এ সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নতুন হিসাব খোলা হয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার। আমানত বেড়েছে ৩ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৮ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। এর মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে ২২ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নানা কার্যক্রমের ফলে গ্রামীণ জনপদে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় এজেন্ট আউটলেটের স্বত্বাধিকারী ও তাঁদের কর্মীদের জন্য ১ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষতা উন্নয়নে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ১০ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি এজেন্ট কেন্দ্রই ব্যাংকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে ব্যাংকের নিকটস্থ শাখা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে। এ ছাড়া ব্যাংকের নিজস্ব সফটওয়্যার এজেন্টরা ব্যবহার করে থাকেন, এতে প্রযুক্তিগত ঝুঁকিও অনেক কম। ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস বাড়ানো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা তৈরি এবং নগদ অর্থের সহজ প্রবাহ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ফলে বিকল্প ব্যাংকিং সেবা ও কার্ডভিত্তিক লেনদেনের প্রসার ঘটছে গ্রাম থেকে গ্রামে। লেনদেন হচ্ছে ব্যাংকের মতোই। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্টগুলোর দৈনিক লেনদেন ৭৫০ কোটি টাকা এবং দৈনিক প্রবাসী আয় সরবরাহ করছে ১৫০ কোটি টাকা। প্রান্তিক মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে শিগগির এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় বিনিয়োগ কার্যক্রম চালু করা হবে।

গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। আমানত বৃদ্ধিতে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা আর্থিক খাতে লেনদেনে উৎকর্ষ সাধনে সাড়া ফেলেছে। ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে নগদ জমা, উত্তোলন, অর্থ স্থানান্তর, ইউটিলিটি বিল গ্রহণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত সব সেবা দেওয়া হয় ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে।


মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক