শীর্ষে অগ্রণী, এবি, ন্যাশনাল ও প্রিমিয়ার

জানুয়ারি থেকে ভালো ঋণকে খেলাপি করা বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও কিছু ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। এ কারণে জানুয়ারি থেকে সব ধরনের ভালো ঋণকে খেলাপি করা বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকের ঋণ আদায় কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এরপরও কিছু ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে।

খেলাপি ঋণ বাড়ার তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি, ন্যাশনাল, প্রিমিয়ার ও ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন করে কোনো ঋণ খেলাপি হচ্ছে না। তবে ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে গিয়ে বহির্নিরীক্ষক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর ফলে জুনের হিসাবে অনেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ২ শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে যেসব ঋণ নিয়মিত করা হয়েছিল, তা–ও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় গত ১৯ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দেয়, ১ জানুয়ারি ২০২০ সালের ঋণের যে শ্রেণিমান ছিল, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ওই ঋণ তার চেয়ে বিরূপ মানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না। এরপর তা সময় বাড়িয়ে আগামী সেপ্টেম্বর করা হয়। এর ফলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও কেউ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৯৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯২ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। এর আগে গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমে আসে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদারনীতি সহায়তার কারণে। মাত্র ২ শতাংশ এককালীন টাকা জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়। আবার এসব গ্রাহককে নতুন করে ঋণ নেওয়ার সুযোগও করে দেওয়া হয়। ফলে ২০১৯ সালে রেকর্ড ৫২ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়। আর চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে পুনঃ তফসিল করা হয় ৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, গত মার্চ-জুন সময়ে কাগজে–কলমে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে বেশির ভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে গেছে, বিশেষ করে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর। তবে এর মধ্যেও অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয় ৬ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা (এমডি) পরিচালক মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঠিক কী কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ল, বুঝতে পারছি না। এই সময়ে তো ঋণ খেলাপি হওয়া বন্ধ।’

এদিকে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৩২০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমে হয়েছিল ৪ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে এবি ব্যাংকের এমডি তারিক আফজালের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত মার্চে ছিল ২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। গত জুন শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৭০৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৬২ কোটি টাকা। মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, জুনে তা বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

জানতে চাইলে প্রিমিয়ার ব্যাংকের এমডি এম রিয়াজুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ২ শতাংশ জমা নিয়ে যেসব ঋণ নিয়মিত করা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে গ্রাহকেরা নিয়মিত রয়েছেন। আবার ঋণ পরিশোধের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, এমন ঋণও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে।

ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৬১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৪৯ কোটি টাকা।

এদিকে গত জুনে সরকারি-বেসরকারি ১১ ব্যাংক ঋণের বিপরীতে চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে পারেনি। সরকারি ব্যাংকগুলো হলো বেসিক, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঘাটতিতে রয়েছে এবি, কমার্স, ন্যাশনাল, ঢাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সোশ্যাল ইসলামী ও ট্রাস্ট ব্যাংক।