বিক্রি বাড়ছে শীতের পিঠার, এবার দামও বেড়েছে

রাজধানীতে ইতিমধ্যে শীতের পিঠার ব্যবসা জমে উঠেছে। তবে উপকরণের দাম বাড়তি থাকায় এবার পিঠার দাম কিছুটা বেড়েছে।

শীতের পিঠাছবি: প্রথম আলো

শীত আসতেই রাজধানীতে রাস্তার মোড়ে, পাড়ায়-মহল্লায় ও অলিগলিতে শীতের পিঠা বিক্রি শুরু হয়েছে। বিক্রেতারা চুলা থেকে নামাতেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্রেতা গরম-গরম পিঠা প্যাকেটে করে নিয়ে যান। তবে বেশির ভাগ ভোক্তাই অবশ্য পথচারী, যাঁরা আসা-যাওয়ার পথে জায়গায় দাঁড়িয়ে একা কিংবা দলবদ্ধভাবে বেশ মজা করে পিঠা খান।

উপকরণের দাম বাড়তি থাকায় এবার ভাপা, চিতইসহ সব পিঠার দামই কমবেশি বেড়েছে। কারণ, আতপ চালের গুঁড়া থেকে শুরু করে গুড়, নারকেল, ডিম, শুঁটকি, শর্ষেদানা, ধনেপাতা, ভোজ্যতেলসহ সব উপকরণের দাম এবার বেড়েছে। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামও বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পিঠার দামে।

বাজারের প্রচলিত জাংক ফুডের পরিবর্তে তেলবীজ, দুধ ও নারকেল দিয়ে তৈরি পিঠা খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে খাবারে বৈচিত্র্য আসে।
বাজারের প্রচলিত জাংক ফুডের পরিবর্তে তেলবীজ, দুধ ও নারকেল দিয়ে তৈরি পিঠা খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে খাবারে বৈচিত্র্য আসে। ফারজানা আনজিন, উপপ্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল

রাজধানীর ফার্মগেট, পান্থপথ, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, পল্টন, সেগুনবাগিচা, বেইলি রোড, শাহজাহানপুর ও মালিবাগ এলাকায় সম্প্রতি ঘুরে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে পিঠার ব্যবসা জমে উঠেছে, যা চলবে শীতের শেষ পর্যন্ত। 

শীতের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ভাপা ও চিতই পিঠার। গত বছরও একেকটি ভাপা পিঠার দাম ছিল গড়ে ১০ টাকা। এবার পিঠাপ্রতি দাম বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে।

পান্থপথের পিঠা বিক্রেতা মো. রবিন বলেন, ‘গতবার ভাপা পিঠা ১০ টাকাই রাখতে পেরেছিলাম। এবার সব জিনিসের দাম বেশি। এ জন্য দাম বাড়াতে হয়েছে। তাতে পিঠার আকারও বড় করেছি।’

এদিকে ভোক্তারা শুঁটকি, শর্ষে, ধনেপাতাসহ নানা পদের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খেতে পছন্দ করেন। দিন দিন অবশ্য ডিম চিতইয়ের চাহিদাও বাড়ছে, যা ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি পুষ্টির জোগান দেয়। হরেক পদের ঝালভর্তাসহ একেকটি ডিম চিতইয়ের দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। সাধারণ চিতই ১০ টাকা। গতবারও একই দাম ছিল। দাম না বাড়লেও কিছু জায়গা আকারে ছোট হয়েছে চিতই পিঠা।

বাংলামোটরের ফুটপাতে ডিম চিতই খেয়ে মনির হোসেন নামের এক পথচারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শর্ষে, শুঁটকি ও ধনেপাতার ভর্তা দিয়ে খেলাম। খেতে ভালোই লেগেছে।’  

তেলের পিঠা বা পোয়া পিঠা, নকশি পিঠা, দুধপুলি, মুগপাকান, পাকান, তিলের পিঠা, পাটিসাপটা, নারকেলপুলি, ছিটপিঠা, সবজিপুলি ইত্যাদি মিলিয়ে শীতের পিঠার তালিকাটা নেহাত ছোট নয়। চালের গুঁড়া, গুড় ও নারিকেলের মতো উপকরণের পাশাপাশি এবার জ্বালানি গ্যাসের দাম বাড়তি থাকায় এসব পিঠার দামও ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে। সাধারণত বিকেল চারটার পর থেকে পিঠা বিক্রি শুরু হয়। চলে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত।

মালিবাগ এলাকার পিঠা ব্যবসায়ী জামাল আহমেদ বলেন, ‘এখন খরচ বাদ দিয়ে দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ থাকছে। শীত বাড়লে এটা হাজার থেকে দেড় হাজার হয়ে যাবে বলে আশা করি।’ তবে দুই মাসের বেশি এই ব্যবসা করা যায় না বলে জানান তিনি।

উপকরণের দাম বেড়েছে

পিঠার প্রধান উপকরণ আতপ চালের গুঁড়া, গুড়, ঘি, দুধ, লবণ, তেল, নারকেল ইত্যাদি। এর মধ্যে মূল উপকরণ আতপ চালের গুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে, যা গতবারের চেয়ে ৫ টাকা বেশি। মানভেদে খেজুরের গুড় ও পাটালির দাম বেড়ে প্রতি কেজি ২২০ থেকে ৩০০ টাকায় উঠেছে, যা এক বছর আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা।

বাজারে আকারভেদে একেকটি নারকেল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর ডাবের দাম চড়া থাকায় নারকেল নিয়ে টানাটানি আছে। তাতে গত বছরের চেয়ে নারকেলপ্রতি দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বছরজুড়েই পিঠার ব্যবসা

শুধু শীতকালেই নয়, দেশে এখন বছরজুড়েই কমবেশি পিঠার ব্যবসা হয়ে থাকে। সে জন্য রাজধানীতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু পিঠার দোকান। স্থায়ী এসব দোকানের পিঠার দাম ৩০ থেকে ১০০ টাকা। ক্রয়াদেশ দিলে অনেকে পিঠা তৈরি করে দেন।

রাজধানীর বেইলি রোডের বেইলি পিঠা ঘরে সারা বছর পিঠা পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মো. সজল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন দিনে ৩০ থেকে ৩৫ পদের পিঠা বিক্রি হচ্ছে। শীত বাড়লে ক্রেতা বাড়ে। তবে সারা বছরই আমাদের পিঠার চাহিদা থাকে। অনেক ক্রেতা আছেন, যাঁরা নিয়মিত আমাদের কাছ থেকে পিঠা নেন।’

রাজধানীর ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালের উপপ্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা ফারজানা আনজিন বলেন, বাজারের প্রচলিত জাংক ফুডের পরিবর্তে তেলবীজ, দুধ ও নারকেল দিয়ে তৈরি পিঠা খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে খাবারে বৈচিত্র্য আসে। এখন মাছ, মাংস ও ডিম দিয়েও মানুষ পিঠা খাচ্ছেন। তাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান আসছে। অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী এসব খাবারের সঙ্গে নতুন প্রজন্ম পরিচিত হচ্ছে। তবে এসব খাবার যেহেতু সব সময় খাওয়া হয় না, সেহেতু খাওয়ার সময় পরিমাণ বুঝে খেতে হবে।