গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থান জোর দেওয়া হবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

‘একটি গ্রাম, একটি পণ্য’ স্লোগানে গ্রামে তৈরি পণ্যকে দেশে-বিদেশে মূলধারার বাজারে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেছেন, সরকার এখন গ্রামভিত্তিক পণ্য ও কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে ‘একটি গ্রাম, একটি পণ্য’ স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামে তৈরি পণ্যকে দেশে-বিদেশে মূলধারার বাজারে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।

স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তৃণমূল নারী উদ্যোক্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ বিষয়ে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুটস উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস বাংলাদেশ (এজিডব্লিউইবি)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সালাহউদ্দিন মাহমুদ।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের তৈরি হস্তশিল্প ও খাদ্যসামগ্রীর বাণিজ্য সম্ভাবনা কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বছরব্যাপী একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার স্লোগান— ‘একটি গ্রাম, একটি পণ্য’। এর মাধ্যমে গ্রামভিত্তিক পণ্যকে মূলধারার বাজারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে। 

আহসানুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা পণ্যের সঙ্গে পণ্যের কারিগরদেরও মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। কোন গ্রাম থেকে কোন কারিগর পণ্যটি তৈরি করল; তা সবার সামনে তুলে ধরা হবে। উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে হলে পণ্য তৈরির কারিগরদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পণ্যের কারিগর ও তৈরির স্থান চিহ্নিত করে তা দেশি-বিদেশি বাজারে পৌঁছে দেওয়া হবে।’

এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের সক্ষম করে গড়ে তোলা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বর্তমান চাহিদার আলোকে প্রযুক্তি ব্যবহার, উদ্ভাবন, জ্ঞান বিনিময় ও বিপণন বিষয়ে তাঁদের দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া কটেজ ও মাইক্রো উদ্যোক্তাদের জন্য কর-ভ্যাটের আলাদা নীতিমালা করা প্রয়োজন।

স্বাগত বক্তব্যে এজিডব্লিউইবির সভাপতি মৌসুমী ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বেই অর্থনীতি এমএসএমই খাতের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদহার, কাঁচামালের স্বল্পতা প্রভৃতি সংকটের মধ্যেও এসএমই খাত আশা দেখাচ্ছে। তবে এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নীতি ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা প্রয়োজন।

দিনব্যাপী এ আয়োজনে তিনটি আলাদা অধিবেশন ছিল। এর মধ্যে সকালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য মো. খায়রুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশের পথে মূলধারার ব্যাংকিং ও তৃণমূল উদ্যোক্তা’ বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, দেশে রিজার্ভ বর্তমানে কিছুটা কম রয়েছে। এ জন্য উদ্যোক্তাদের রপ্তানিমুখী হওয়া প্রয়োজন। তবে পণ্যের মানের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন তিনি।

প্রান্তিক ও নারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন নিয়ে সচেতনার অভাব রয়েছে বলে জানান এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি বলেন, ঋণের ক্ষেত্রে বর্তমানে গ্রুপ গ্যারান্টির মতো অনেক সুবিধা রয়েছে। তবে না জানার কারণে উদ্যোক্তারা এসব সুবিধা নিতে পারেন না। 

জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. গোলাম মরতুজা বলেন, প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাবে নারী উদ্যোক্তারা সঠিক সময়ে ঋণ নিতে পারেন না। এ ছাড়া মৌসুমি ব্যবসায়ের জন্য অনেকে ঋণ নিতে আসেন। এসব ক্ষেত্রে ঋণের কিস্তি ফেরত পেতে সমস্যা হয়।

আইএফআইসি ব্যাংকের ডিএমডি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক পুরুষ তাঁর স্ত্রীকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রয়োজনে ঋণ নিতে চান। এটা বুঝতে পারলে আমরা এমন ঋণ নিরুৎসাহিত করি।’