নতুন প্রকল্প এনেছে প্রতিষ্ঠানগুলো

রাজনীতিতে শিগগিরই স্থিতিশীলতা ফিরবে এবং দেশের উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে, এমন প্রত্যাশা থেকে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছে আবাসন খাত। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই এখন নতুন নতুন আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্প গ্রহণ করছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে, আবার কিছু প্রকল্প রয়েছে শুরু হওয়ার অপেক্ষায়।

এসব নতুন প্রকল্পের ফ্ল্যাট ও প্লট নিয়ে ক্রেতাদের দ্বারে পৌঁছাতে আবাসন ব্যবসায়ীরা রিহ্যাব মেলায় অংশ নিয়েছেন, যা চলছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) চার দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করেছে।

মেলার দ্বিতীয় দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়সহ নানা ধরনের অফার। তবে বড়দিনের ছুটি থাকলেও এদিন রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ক্রেতা–দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল কম।

আবাসন ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে নতুন প্রকল্পগুলোর বড় একটি অংশ গড়ে উঠছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, পূর্বাচল নতুন শহরের জলসিঁড়ি এবং উত্তরাকে কেন্দ্র করে। এর বাইরে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের মতো রাজধানীর প্রতিষ্ঠিত এলাকাগুলোতেও নতুন নতুন বহুতল ভবন তৈরির কাজ চলছে।

— রাজনীতিতে দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরবে এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে, এমন প্রত্যাশা থেকে আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছে।

দেশের অন্যতম আবাসন প্রতিষ্ঠান কিউব হোল্ডিং মেলায় অংশ নিয়ে তাদের চলমান ও আসন্ন প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরছে। ১৩ বছরের পথচলায় কিউব হোল্ডিংস ইতিমধ্যে ১১টি প্রকল্প সফলভাবে হস্তান্তর করেছে এবং বর্তমানে ৩৯টি প্রকল্প বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন। এর মধ্যে বড় অংশ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। এ ছাড়া উত্তরা, গুলশান, বনানী ও জলসিঁড়ির মতো পরিকল্পিত ও অভিজাত এলাকায় তাদের প্রকল্প চলছে। তাদের ফ্ল্যাটের আয়তন ৯৫০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪ হাজার বর্গফুট পর্যন্ত, যেখানে প্রতি বর্গফুটের মূল্য ১২ হাজার ৫০০ থেকে ১৮ হাজার টাকায় নির্ধারিত। চলমান প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজের অগ্রগতি ২৫ থেকে ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। মোট ফ্ল্যাটের প্রায় ৬৫ শতাংশ ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। প্রকল্পগুলো চুক্তিভেদে তিন-চার বছরের মধ্যে হস্তান্তরের লক্ষ্য রয়েছে। কিউব হোল্ডিংসের প্রকল্পগুলো মূলত লাক্সারি ও কন্ডোমিনিয়াম শ্রেণিভুক্ত।

কিউব হোল্ডিংসের জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক তৌফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পগুলো অনন্য। মেলায় দর্শনার্থীরা আসছেন ও খোঁজখবর করছেন।’

এদিকে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিল্ডিং ফর ফিউচার লিমিটেড মেলায় ১২টি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে আরও কিছু দৃষ্টিনন্দন বাণিজ্যিক এবং আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানায়। সম্প্রতি উত্তরার জি কিউ শেফালী টাওয়ার এবং মাদানী অ্যাভিনিউয়ে অলকানন্দ টাওয়ার হস্তান্তর করেছে তারা। দুটি ভবনই ১৪ তলা। পাশাপাশি মেলায় তারা প্রদর্শন করছে নতুন বাণিজ্যিক প্রকল্প ‘আলী’স কিংসুক’। নতুন প্রকল্পটি রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রান্তে সোনারগাঁও রোড এবং ফ্রি স্কুল স্ট্রিট রোডের সংযোগস্থলে গড়ে উঠবে। এর বাণিজ্যিক স্পেসের আয়তন হবে ১ হাজার থেকে ৭ হাজার বর্গফুট পর্যন্ত এবং প্রতি বর্গফুটের মূল্য ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। মেলায় প্রকল্পটিতে আগ্রহী ক্রেতাদের জন্য ১০ শতাংশ মূল্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক রনি দত্ত বলেন, ‘আমরা সফলভাবে ১০৭টি প্রকল্প হস্তান্তর করেছি। নতুন প্রকল্পগুলোতে দর্শনার্থীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

রিহ্যাব মেলায় ক্রিডেন্স হাউজিং বিভিন্ন প্রকল্প তুলে ধরছে। রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড, হুমায়ুন রোড ও বাবর রোড, কলাবাগান, উত্তরা, নর্থ রোড, সেন্ট্রাল রোড, শান্তিনগর, খিলগাঁও, বেইলি রোড এবং আর কে মিশন রোড—রাজধানীর এসব প্রতিষ্ঠিত আবাসিক এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প রয়েছে। ক্রিডেন্স হাউজিংয়ের ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার ৩০০ বর্গফুট থেকে ৩ হাজার ৪০০ বর্গফুট পর্যন্ত।

ক্রিডেন্স হাউজিংয়ের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সাখাওয়াত হোসেন সজল জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের মূল্য ১২ হাজার টাকা থেকে ৩২ হাজার টাকা।

২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করা কম্প্রিহেনসিভ হোল্ডিংস লিমিটেড ঢাকা ও চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ১১১টির বেশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ৪২টির বেশি প্রকল্প নির্মাণাধীন, যার মধ্যে রয়েছে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও বৃহৎ কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প। প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্পগুলোর মধ্যে সিদ্ধেশ্বরীতে কম্প্রিহেনসিভ আমিনাবাদ হাউজিং, এটি ৮৮ কাঠা জমির ওপর গড়ে উঠছে। এ ছাড়া মিরপুরের কাজীপাড়ায় ভিক্টোরিয়াস পার্ক, বসুন্ধরা আবাসিকের এ ব্লকে প্যালেস ইনামোরি ও ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে মোনার্ক সেন্টারের (বাণিজ্যিক প্রকল্প) কাজ চলছে। আবাসিক প্রকল্পগুলোর আয়তন ১ হাজার ১৭৫ থেকে ২ হাজার ৩৭০ বর্গফুট পর্যন্ত। বাণিজ্যিক ইউনিটগুলোর আয়তন ৪ হাজার ৪০৭ থেকে ৮ হাজার ৮১৪ বর্গফুট। প্রকল্পভেদে তাদের আবাসিক ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।

কম্প্রিহেনসিভ হোল্ডিংসের সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পগুলোতে গ্রাহকদের আগ্রহ রয়েছে।’