বাণিজ্য বিনিয়োগে পাঁচ সমস্যা দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা

অ্যামচেমের মাসিক মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে (মাঝখানে)
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তা সত্ত্বেও দেশটির কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব ও আয় প্রত্যাবাসন, লেনদেন, অস্বচ্ছ নিয়মনীতি প্রণয়ন, মেধাস্বত্ব আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং সরবরাহ ও পরিবহন সমস্যা। এগুলোর সমাধান করা গেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ব্যাপারে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) মাসিক মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশের দুর্বলতা থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এসব সমস্যা সমাধানে দেশটি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

অ্যামচেমের এবারের মধ্যাহ্নভোজ সভায় আলোচনার বিষয় ছিল ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’। এতে মূল বক্তা ছিলেন জন ফে, যিনি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে সম্প্রতি চালু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস কার্যালয়ের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর। সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। আর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অ্যামচেম সহসভাপতি ও মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।

অনুষ্ঠানে জন ফে বলেন, প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বিনিয়োগের দৃঢ় আগ্রহ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এসব সমস্যা বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা অর্জনের সক্ষমতাকে সীমিত করে দেয়।

পাশাপাশি বেশি পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার পথেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানান জন ফে। তিনি বলেন, তবে এই বাণিজ্য কেবল নির্দিষ্ট কিছু খাতে সীমাবদ্ধ। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৯০ ভাগই পোশাক খাতের। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রধান আমদানি পণ্য ইস্পাত ও কৃষির মতো কয়েকটি খাত। ফলে নতুন নতুন ক্ষেত্রে আরও বেশি বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

জন ফে বলেন, দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, ভোগ্যপণ্য ও ফ্র্যাঞ্চাইজিসহ বেশ কিছু খাতে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানো যেতে পারে। অনেক মার্কিন কোম্পানি এ দেশে ব্যবসায়িক অংশীদার, পরিবেশক ও এজেন্ট খুঁজছে। আবার বাংলাদেশ থেকেও অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্দিষ্ট পণ্য, পরিষেবা ও প্রযুক্তি খুঁজছেন। উভয় ক্ষেত্রেই ঢাকার কমার্শিয়াল কাউন্সেলর কার্যালয় সহযোগিতা করতে পারে। তবে এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের থেকে সঠিক নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। তাহলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হবে বাংলাদেশ।

অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো এ দেশে উন্নত প্রযুক্তি, বিশেষায়িত জ্ঞান বিনিময় ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে অবদান রাখছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। তাই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে বিদ্যমান বাধাগুলো চিহ্নিত করে তা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তরপর্বে আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক এ গফুর বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ভিয়েতনামের তুলনায় এ দেশে মার্কিন বিনিয়োগ বাণিজ্য অনেক কম কেন জানতে চান। এর উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে বলেন, কারণ নিশ্চয়ই আছে। ভিয়েতনামের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল, কর্মপরিবেশও ভালো। সুতরাং ভালো পরিবেশ দেখলে বাংলাদেশেও বেশি সংখ্যায় মার্কিন কোম্পানি আসবে।

কর্মপরিবেশ উন্নত করার শর্ত দিয়ে ২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করে। বাংলাদেশ পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা বা জিএসপি পাবে কি না, তা নিয়ে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন। উত্তরে জন ফে বলেন, এ–সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য তাঁর জানা নেই।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে একটি বাণিজ্যিক পরিষেবা কার্যালয় (এফসিএস) খোলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জন ফে বলেন, এই কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আরও বেশি পণ্য ও বিনিয়োগ আনতে কাজ করছে। পাশাপাশি তা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক স্বার্থ সুরক্ষার কাজটিও করছে।