অপরিশোধিত জ্বালানি তেল: শীর্ষ ১০ দেশ কারা, কোন দেশে মজুত সবচেয়ে বেশি

যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল উৎপাদন করে, তাদের কাছেই সবচেয়ে বেশি তেলের মজুত থাকে—সাধারণভাবে এমনটাই মানুষ ভাবেন। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়। বিভিন্ন কারণেই তা হতে পারে। আবার প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা এক কথা, আর তার উন্নয়ন আরেক কথা।

দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেলের মজুত আছে কোন দেশগুলোতে।

ভেনেজুয়েলা

রাজনৈতিকভাবে অনেক ডামাডোলের মধ্যে থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেলের মজুত আছে ভেনেজুয়েলায়—৩৩০ বিলিয়ন বা ৩৩ হাজার কোটি ব্যারেল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে দেশটি এই তেলভান্ডার ব্যবহার করতে পারছে না। অথচ ১৯৯০-এর দশক ও ২০০০-এর শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলা প্রচুর তেল বিক্রি করেছে।

২০২২ সালে ভেনেজুয়েলা দৈনিক গড়ে ছয় থেকে সাত লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে; রপ্তানি করেছে ছয় লাখ ব্যারেল।

সৌদি আরব

সৌদি আরবের তেলের মজুত ২৬৭ বিলিয়ন বা ২৬ হাজার ৭০০ কোটি ব্যারেল। তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী এবং ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। ২০২১ সালে তাদের দৈনিক উৎপাদন ছিল ৯০ লাখ ব্যারেলের কিছু বেশি, ২০২২ সালে যা ১ কোটি ১৫ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হয়।

২০২৭ সালের মধ্যে সৌদি আরব দৈনিক তেল উৎপাদন ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করতে চায়। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, সৌদি আরব তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

ইরান

ইরানের অপরিশোধিত তেলের মজুত ২০৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ৮৬০ কোটি ব্যারেল; দৈনিক উৎপাদন ২৩ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল। তবে তারা রপ্তানি করে দৈনিক ৭ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেলের কিছু বেশি। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে এটা হয়েছে। তবে সম্প্রতি ইরানের তেল রপ্তানি বেড়েছে। তেলের উৎপাদন আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা তাদের আছে।

কানাডা

কানাডার অপরিশোধিত তেলের মজুত ১৭১ বিলিয়ন ১৭ হাজার ১০০ কোটি ব্যারেল, যার সিংহভাগই আসে বিটুমিন থেকে। কানাডা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। গত বছর দেশটি দিনে ৫০ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল উৎপাদন করেছে। দেশটির কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য থাকলেও চাহিদা বেশি থাকায় কানাডার তেল উৎপাদন বাড়ছে। সম্প্রতি ইপসোসের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত তেল সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে কানাডা।

ইরাক

ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে ইরাক। তাদের মজুত আছে ১৪৫ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার ৫০০ কোটি ব্যারেল; দৈনিক উৎপাদন ৪৫ লাখ ব্যারেল ও রপ্তানি ৩৪ লাখ ব্যারেল।

উৎপাদনের দিক থেকে তারা সৌদি আরবকে ধরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তারা দিনে সর্বোচ্চ ৬৩ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করতে পেরেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত

ওপেক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাদের কাছে মজুত আছে ১১১ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ১০০ কোটি ব্যারেল তেল। দিনে তারা উৎপাদন করে ২৭ লাখ ব্যারেল তেল। এর মধ্যে বিদেশে রপ্তানি করে ২৩ লাখ ব্যারেল।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মজুত থাকলেও আরব আমিরাত কেবল তেলের মধ্যেই অর্থনীতি সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না। নানাভাবে অর্থনীতির বহুমুখীকরণের চেষ্টা করছে তারা। বিশেষ করে বিলাসবহুল আবাসনের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে আরব আমিরাত, সেই সঙ্গে উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে দেশটি।

কুয়েত

ওপেকের তথ্যানুসারে, কুয়েতের তেলের মজুত ১০১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ১৫০ কোটি ব্যারেল। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের ছোট এ দেশ দৈনিক গড়ে ২৪ লাখ থেকে ২৬ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করে এবং রপ্তানি করে ১৭ লাখ ব্যারেল।

কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিকল্পনা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির তেল উৎপাদন দিনে ৪০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করা। তবে তেলের চাহিদা কমে যাবে, এমন পূর্বাভাসে কুয়েত বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না।

রাশিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যানুসারে, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের মজুত ৮০ বিলিয়ন বা ৮ হাজার কোটি ব্যারেল। দিনে তারা উৎপাদন করছে ৯৪ লাখ ব্যারেল।

কয়েক বছর আগে রাশিয়া দিনে ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করত। তবে ইউক্রেনে হামলার জেরে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তার জেরে দেশটির তেল উৎপাদন কমেছে। তা সত্ত্বেও দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও জ্বালানি রপ্তানি যুদ্ধের আগের পর্যায়ে ফিরেছে।

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত ঠিক কত, তা নিয়ে অনেক ভিন্নতা আছে। এক হিসাবে দেশটির মোট তেলের মজুত ৬৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ব্যারেল বা ৬ হাজার ৮৮৯ কোটি ব্যারেল; আরেক হিসাবে তাদের মজুত ৭৪ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৪০০ কোটি ব্যারেল। তবে মজুত যা-ই হোক, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী।

লিবিয়া

উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার মজুত আছে প্রায় ৪৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮৩০ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল। তা সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে তাদের সরবরাহ খুবই কম—দিনে মাত্র ১২ লাখ ব্যারেল।

লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে দেশটিতে যে রাজনৈতিক ডামাডোল চলছে, তার জেরে তারা তেল উত্তোলন করতে পারছে না। তবে সম্প্রতি ইউরোপ উত্তর আফ্রিকার এ দেশের দিকে আবার ঝুঁকতে শুরু করেছে। এতে তাদের তেল ব্যবসা আবারও ফুলেফেঁপে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: অয়েল প্রাইস ডটকম