কৃষকেরা দাম পান না, মুনাফা করে মধ্যস্বত্বভোগী: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেন না। অপরদিকে ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। মাঝখানে মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা করছে। এই মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। ‘স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার: ভ্যালু চেইন উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে ডিসিসিআই। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব মো. সামসুল আরেফিন।

সেমিনারে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট কৃষির কোনো বিকল্প নেই। পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। দেশের কোন জায়গায় তুলনামূলক কম দামে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেই তথ্য পেতে একটি বিশেষ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা প্রয়োজন। এ জন্য তথ্যপ্রযুক্তিবিদেরা কাজ করতে পারেন।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, আমদানি-রপ্তানিকারকদের সুবিধার্থে খুব শিগগির ঢাকা চেম্বার কার্যালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হবে। সেখান থেকে আমদানি ও রপ্তানি সনদ-সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে।

সেমিনারে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, কৃষি খাতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদনশীলতা ২০-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এতে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যয় কমবে ২০ শতাংশ। পাশাপাশি কৃষকের আয়ও ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

আশরাফ আহমেদ আরও বলেন, কৃষি খাতে পর্যাপ্ত সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকা, বাজারে পণ্য প্রবেশে সুযোগ কম থাকা এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজনে দুর্বলতাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কৃষি যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন ও কৃষকদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কৃষি গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও কার্যকর সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরির ওপর জোর দেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘কৃষি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী কার্যক্রম বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ ছাড়া উৎপাদিত কৃষিপণ্য পুনর্ব্যবহারে আমাদের আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী করে প্রযুক্তিসেবা প্রদানে দেশের তরুণ প্রযুক্তিবিদেরা কাজ করতে পারেন।’

ডিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি খাত প্রায়ই বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে। সেই সঙ্গে প্রচলিত কৃষি পদ্ধতি ব্যবহারের কারণেও উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়। এ অবস্থায় নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক স্মার্ট কৃষি হতে পারে সমাধান।

সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইফার্মারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহাদ ইফাজ ও সুইসকন্টাকের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (প্রোগ্রাম) মোহাম্মদ সাকিব খালেদ। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) জ্যেষ্ঠ কৃষিবিদ মো. আব্দুল কাদের, সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু বাকের সিদ্দিকী, অ্যাকুয়ালিংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও সৈয়দ রিজবান হোসেন, উইন ইনকরপোরেটের সিইও কাশফিয়া আহমেদ, চাষি ইনকরপোরেশনের সিইও মদিনা আলী, ক্রান্তি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ রিশালাত সিদ্দীকি, ডিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী প্রমুখ।