বাইডেন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি, ঋণসীমা বৃদ্ধি নিয়ে আজ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ৯ মে হোয়াইট হাউসে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির সঙ্গে এক বৈঠক করেন
ছবি রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধির বিষয়ে আজ মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির বৈঠক হবে। সে জন্য বেশ প্রস্তুতি নিয়ে আটঘাট বেঁধেই তাঁরা বৈঠকে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় এই বৈঠক হবে। সেখানে প্রেসিডেন্ট ও হাউস স্পিকার ছাড়াও কংগ্রেসের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতা অংশ নেবেন।

দেশটির ঋণ বেড়ে আগের নির্ধারণ করা সীমার কাছে পৌঁছে গেছে। সুতরাং জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধি না করলে ফেডারেল সরকার ঋণ গ্রহণ করতে পারে না; ফলে জুন মাসের শুরুতেই তারা খেলাপি হয়ে পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে রিপাবলিকান দলের ঐকমত্য জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ এখন রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে; কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডেমোক্র্যাট দলের। ফলে বাইডেনের পক্ষে সহজে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। রিপাবলিকানরা বলেছে, ডেমোক্র্যাটরা সরকারি ব্যয় কমানোর অঙ্গীকার না করলে তারা ঋণের সীমা বৃদ্ধির পক্ষে ভোট দেবে না। ঋণের সীমা না বাড়লে দেশটির সরকার গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়বে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চান, কংগ্রেস বিনা শর্তে ঋণের সীমা বৃদ্ধি করুক। তিনি বলেন, ঋণের সীমা বৃদ্ধির বিষয়ে আপস বা শর্ত দেওয়া যাবে না। এই বিষয় সুরাহা হওয়ার পরই কেবল বাজেট হ্রাসের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

কিন্তু হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি বলেছেন, বৈঠকের আগে অগ্রগতির তেমন কোনো লক্ষণ তিনি দেখেছেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আবার বৈঠক শেষ করে জি–৭-এর বৈঠকে অংশ নিতে জাপানে যাবেন।

ম্যাককার্থি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না, এই পরিস্থিতিতে হাতে যে সময় আছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।’

সাংবাদিকেরা ম্যাককার্থিকে জিজ্ঞাসা করেন, ঋণের সীমা বৃদ্ধির বিষয়ে ঐকমত্য না হলে বাইডেনের কি জি–৭-এর বৈঠকে অংশ নেওয়া উচিত। জবাবে ম্যাককার্থি বলেন, ‘দেখুন, আমি মনে করি মার্কিন প্রেসিডেন্টের মূল কাজ হওয়া উচিত দেশের সমস্যা সমাধান করা। সেটা হলে বোঝা যায়, তাঁর অগ্রাধিকার কী বা কোন মূল্যবোধের মানুষ তিনি।’

এদিকে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জো বাইডেন বলেন, উভয় পক্ষই ঐকমত্যে আসতে চায় বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে; কিন্তু সময় খুব কম। বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের জাপান সফরের কারণে বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে গেছে।

রয়টার্সের আরেক সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় ‘এক্স-ডেট’ আসন্ন। অর্থাৎ, সেই সময় আর খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন সরকারের পক্ষে সব ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই সেই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ, জুনের আগে ঋণসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে মার্কিন সরকার খেলাপি হয়ে যেতে পারে।

বর্তমানে দেশটির জাতীয় ঋণের সীমা ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন বা ৩১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। ২০০৮ সাল থেকেই ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তারপর ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে করোনা মহামারি। তখন নাগরিকদের কয়েকবার আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের ফিসক্যালডেটা ডট ট্রেজারি ডট গভের তথ্যানুসারে, ২০০৭ সালে মন্দা শুরুর সময় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ছিল ৯ লাখ কোটি ডলারের বেশি। সেটা বাড়তে বাড়তে ২০ লাখ কোটিতে পৌঁছায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে। জো বাইডেনের আমলে সব মিলিয়ে ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩০ লাখ কোটি ডলারের বেশি।

তথ্য বলছে, ২০২২ সালের শেষে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহীত ঋণের সুদহার ছিল ২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, ২০১৯ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চে দেশটি ঋণ পরিশোধ করেছে ৩৮৪ বিলিয়ন বা ৩৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার, যা তাদের ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় ব্যয়ের ১২ শতাংশ।

১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ছিল জিডিপির ৩২ শতাংশ। ১৯৮১ সালের পর থেকে তা বাড়তে শুরু করে। ২০২২ সালে তা বেড়ে ১২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।