বিকাশ অ্যাপে সেভিংস স্কিম: ঝামেলাহীন সঞ্চয়ে ভরসা পাচ্ছেন গ্রাহকেরা

ছোটবেলা থেকেই সাইফুলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে মায়ের হাতের সোনার বালা বানিয়ে দেবেন। কালীগঞ্জ বাজারে ছোট্ট দোকানটা নিয়ে যখন ব্যবসা শুরু করলেন, তখন তাঁর স্বপ্নটা পূরণের ইচ্ছা আরও প্রবল হয়ে উঠল। একবারে ব্যবসার পুঁজি বা লাভ থেকে টাকা দিয়ে বালা বানিয়ে দেওয়া মুশকিল হবে। তাই মাসে মাসে একটু একটু করে টাকা জমাচ্ছেন সাইফুল। এই ডিপিএসের মেয়াদ পূর্ণ হলেই পূরণ হবে তাঁর স্বপ্ন।

সাইফুল বলেন, ‘ব্যাংকে যাওয়া, বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিয়ে সেভিংস নেওয়া হয়ে ওঠে না। আবার ব্যাংকে যতটুকু টাকা সঞ্চয় হয়েছে তার ওপর কত লাভ এল, সেটাও দেখা যায় না। বিকাশ সেভিংস স্কিমে হিসাব খোলার পর থেকে টাকার পরিমাণটা দেখতে পাচ্ছি। আমার ইচ্ছা আছে, বিকাশ অ্যাপে জমানো টাকা দিয়ে আমার মাকে সোনার বালা তৈরি করে দেব।’

মায়ের হাতের বালা বানিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হোক বা অন্য কোনো প্রয়োজন—সাইফুলের মতো লাখ লাখ বিকাশ গ্রাহক মাসিক সঞ্চয়ের জন্য নির্ভর করছেন বিকাশ অ্যাপের ওপর।

প্রতি মাসে অল্প অঙ্কের টাকা জমানোর মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করার প্রবণতা দেশের প্রতিটি প্রান্তের ক্ষেত্রেই বেশ প্রচলিত। তবে ব্যাংকিং সময় মেনে ব্যাংকে গিয়ে হিসাব খুলে বা প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে টাকা জমা দেওয়া বা সেভিংসের টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে যাওয়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার মতো নানা ঝামেলার কারণে অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সঞ্চয় থেকে বিরত থাকেন। অনেকে আবার অনিরাপদ বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সমিতির মাধ্যমে টাকা জমিয়ে বিপদেও পড়েন। এসব অসুবিধা না থাকায় বিকাশ অ্যাপ থেকে সেভিংস সেবায় আগ্রহী হচ্ছেন গ্রাহকেরা।

এ প্রসঙ্গে বিকাশের চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার মাহফুজ সাদিক বলেন, ‘সঞ্চয় করা যেমন ব্যক্তিজীবনে গুরুত্বপূর্ণ, অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিকাশের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গ্রাহকদের সঞ্চয়ে আগ্রহী করা আমাদের উদ্দেশ্য। বিভিন্ন ব্যাংকের সঞ্চয় স্কিম বিকাশ অ্যাপে পাওয়ার কারণে গ্রাহক তাঁর পছন্দ অনুযায়ী সঞ্চয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া এ সেবায় যুক্ত হয়েছেন ১৪ লাখ গ্রাহক, যাঁদের মধ্যে ৩০ শতাংশই নারী। তেমনই একজন নারী উদ্যোক্তা ইতি মনি। তাঁর মালিকানায় রয়েছে পারলারের ব্যবসা। নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে তিনিও ভরসা রেখেছেন বিকাশ সেভিংস স্কিমে। ইতি মনি বলেন, ‘অধিকাংশ গ্রাহক আমাকে বিকাশেই পেমেন্ট করেন। তখন আমি চিন্তা করলাম, এখান থেকে তো আমি একটা সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতেই পারি। সংসার ও পারলার সামলিয়ে ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দেওয়া সত্যি কষ্টকর। মাঝেমধ্যে টাকা জমা দেওয়ার তারিখও ভুলে যাই। টাকা জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট তারিখের দুই দিন আগেই বিকাশ অ্যাপে নোটিফিকেশন আসে। ফলে জমার কিস্তি কখনোই মিস হয় না। সবকিছু ভেবেচিন্তে আমি ঝামেলাহীন ও সহজ সঞ্চয় খুলেছি বিকাশে, যা আমার জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। আর একসঙ্গে টাকাটা যখন পাব, তখন তো ভালো কাজে লাগবে।’

মাসিক ৫০০, ১ হাজার, ২ হাজার ও ৩ হাজার টাকা কিস্তিতে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ চার বছর মেয়াদে মাসিক সঞ্চয় সেবা নেওয়ার সুযোগ আছে বিকাশ অ্যাপে। কোনোরকম কাগজপত্রের ঝামেলা ও ব্যাংক হিসাব ছাড়াই খুব সহজে কয়েক মিনিটেই বিকাশ অ্যাপ থেকে এই সেবা নেওয়ার সুযোগ আছে। ফলে সব শ্রেণির গ্রাহকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই সেবা।

তেমনই একজন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চা-দোকানি বিলকিস বেগম। তিনি ও তাঁর স্বামী মিলে বিকাশে সঞ্চয় করছেন তিন সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। বিলকিস বেগম বলেন, ‘হাতে টাকা এলেই নানা কারণে খরচ হয়ে যায়। জমানো হয় না। কিন্তু প্রতি মাসে কিস্তি দিতে হয় দেখে জমা হয়ে যাচ্ছে। বিকাশে সঞ্চয় খোলার পর থেকে আমার সন্তানদের পড়ালেখার খরচ নিয়ে সেভাবে আর দুশ্চিন্তা করছি না। ওরা পড়ালেখা করে বড় হবে—এ স্বপ্ন নিয়েই তাদের জন্য সঞ্চয় করছি।’

বিকাশ অ্যাপে সেভিংস সেবার মধ্যে বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ঢাকা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের মাসিক সঞ্চয় সেবা যুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি সিটি ব্যাংকের শরিয়াহভিত্তিক ইসলামিক সেভিংস সেবা গ্রহণ করতে পারছেন বিকাশ অ্যাপ থেকেই। এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের রিটেইল ব্যাংকিং সেবার হেড অব রিটেইল ডিপোজিট অ্যান্ড লেন্ডিং প্রোডাক্ট মো. মনিরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংকের সেবা তুলনা করে নিজের জন্য যেটি ভালো, সেটি নির্বাচন করতে পারবেন। আমি মনে করি, এটি ওয়ান স্টপ সলিউশন সার্ভিস হিসেবে সবার জন্য তৈরি হলো।’

গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী প্রতি মাসের নির্ধারিত তারিখে সঞ্চয়ের কিস্তিও বিকাশ অ্যাপ থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হয়ে যাবে। জমার নির্ধারিত তারিখের আগে অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স রাখার জন্য গ্রাহককে নোটিফিকেশন দেওয়া হয়। সঞ্চয়ের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর মুনাফাসহ সব টাকা গ্রাহকেরা তাঁদের বিকাশ অ্যাকাউন্টেই পেয়ে যান। সঞ্চয়ের যেকোনো পর্যায়ে টাকা তুলে নিতে চাইলে তা–ও বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমেই করতে পারবেন গ্রাহক।

ইসলামি সেভিংসের ক্ষেত্রে শরিয়াহ মোতাবেক মুনাফা পাবেন গ্রাহক। সেভিংস সেবা চালু করতে বিকাশ অ্যাপের হোম স্ক্রিনে ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয় বা সেভিংস’ আইকনে ক্লিক করতে হবে। তারপর ‘সাধারণ সেভিংস’ বা ‘ইসলামিক সেভিংস’ নির্বাচন করতে হবে। পরবর্তী ধাপে নিজের ও নমিনির তথ্য যোগ করে কয়েকটি সহজ ধাপে সেবাটি চালু করতে পারেন গ্রাহক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এই সঞ্চয়ের মুনাফা ও অন্যান্য বিধিবিধান প্রতিপালিত হয় এবং ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে নিবন্ধিত বিকাশ গ্রাহকেরা এই সঞ্চয় সেবা নিতে পারছেন।

সঞ্চয়ের পদ্ধতিকে আরও সহজ, সময়-সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও লাভজনক করে তোলার পাশাপাশি এই সেবার উদ্দেশ্য সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করা।