পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী উৎপাদনে কনকর্ডের নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় পঞ্চম প্ল্যান্টটি স্থাপন উপলক্ষে সম্প্রতি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণামতে, বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে প্রভাবিত দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও নানা প্রাকৃতিক কারণে পৃথিবীর অন্যতম জলবায়ুঝুঁকিপূর্ণ আমাদের দেশ। পরিবেশ ও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ পোড়ামাটির ইট। পোড়ামাটির ইট ব্যবহারের ফলে বায়ুদূষণ হয় সর্বোচ্চ মাত্রায়, যার ফলে বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকার অবস্থান শীর্ষে।

পরিবেশের এ দূষণ রোধে, বাংলাদেশে ২৫ বছর আগেই প্রথম গ্রিন ব্রিক উৎপাদন ও ব্যবহার শুরু করে কনকর্ড। কনকর্ডের চেয়ারম্যান এস এম কামাল উদ্দীনের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে বারিধারা থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে গড়ে ওঠে পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের প্রথম দূষণমুক্ত স্যাটেলাইট নগরী ‘লেকসিটি কনকর্ড’। উল্লেখ্য, গত ২৫ বছরে কনকর্ডের কোনো প্রকল্পে পোড়ামাটির ইট ব্যবহৃত হয়নি।

কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে বানানো ইট পোড়াতে কয়লা ও গাছ ব্যবহার করায় পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পোড়া ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বৃদ্ধি পরিবেশের ক্ষতি বন্ধে নতুন আশার সৃষ্টি করেছে। দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা ও পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কনকর্ড স্থাপন করেছে তাদের পঞ্চম গ্রিন ব্লক বা ব্রিকস প্ল্যান্ট।

কনকর্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় প্ল্যান্টে স্পেনের তৈরি পোয়েটোস পি সেভেন্টি/নাইনটি নামের দুটি মেশিন বসানো হয়, যার মাধ্যমে প্রতিটি প্ল্যান্টে প্রতি ৮ ঘণ্টায় ৫৯ হাজার ৫২০টি করে মোট ১ লাখ ১৯ হাজার ৪০টি নির্মাণসামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভব। তৃতীয় প্ল্যান্টে জার্মানি থেকে ডিজাইনকৃত টি-টেন নামের একটি মেশিন যোগ করা হয়, যা প্রতি ৮ ঘণ্টায় ২৬ হাজার ৮০টি নির্মাণসামগ্রী উৎপাদন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বেসার নামের মেশিনটি কনকর্ডের চতুর্থ প্ল্যান্টে বসানো হয়, যা প্রতি ৮ ঘণ্টায় উৎপাদন করতে পারে ১২ হাজার নির্মাণসামগ্রী।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় পঞ্চম প্ল্যান্টটি স্থাপন করেছে কনকর্ড। এ উপলক্ষে সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কনকর্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার কামাল, পরিচালক নাজিয়া কারিশমা কামাল, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আশরাফুল আলম এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুস সালাম মোল্লা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে কৃষিজমির মাটির ব্যবহার ও বায়ুদূষণ কমাতে সরকারি নির্মাণকাজে ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিবছর ২০ শতাংশ হারে পরিবেশবান্ধব ব্লক বা ইট সরকারি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করেই নতুন এই প্ল্যান স্থাপন করেছে কনকর্ড। প্ল্যান্টটিতে প্রতি ৮ ঘণ্টায় গড়ে তৈরি হবে ৭৪ হাজার পিস নির্মাণসামগ্রী। জার্মানিতে প্রস্তুত করা জেনিথ জেড এন-নাইন হানড্রেড সি নামের নতুন এই মেশিনের মাধ্যমে কনকর্ডের সক্ষমতা ৩০-৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। উন্নত মানের ও আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এই প্ল্যান্ট নির্মাণশিল্পে এক অনন্য মাত্রা যোগ করবে। একই সঙ্গে পরিবেশের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

কনকর্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার কামাল বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এই খাতে ট্যাক্স আর আমদানি শুল্ক মওকুফ করলে পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন–প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করা সম্ভব। সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করলে এই খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা এগিয়ে আসবে।’

উল্লেখ্য, দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কনকর্ড। পোড়ামাটির ইটের ব্যবহার বন্ধে ১৯৯৮ সালে কনকর্ডই বাংলাদেশে প্রথম গড়ে তোলে পরিবেশবান্ধব ইট, ব্লক ও টাইলস নির্মাণের কারখানা। পরিবেশদূষণ রোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২০’–এ ভূষিত হয় কনকর্ড।