মহাসড়কে বাইক রাইডিং নিরাপত্তায় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন একদল তরুণ

‘আপনার সচেতনতা, আমার নিরাপত্তা’ স্লোগানে ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাব ভিন্নভাবে উদ্‌যাপন করে এবারের বন্ধু দিবসছবি: সংগৃহীত

একজন আরেকজনকে ফুল দিচ্ছেন, হাসিমুখে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন। পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলিও করছেন। এমন দৃশ্য দেখলে দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক কী, সেটা সম্পর্কে ধারণা করা যায়—বন্ধুত্ব। গতকাল রোববার বন্ধু দিবসে এমন দৃশ্যই দেখা গেল ঢাকার মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে। বন্ধু দিবসের আন্তরিক এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন ‘সাপে-নেউলে’ সম্পর্কে থাকা বাসচালক ও বাইক রাইডাররা।

‘আপনার সচেতনতা, আমার নিরাপত্তা’ স্লোগানে ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাব ভিন্নভাবে উদ্‌যাপন করে এবারের বন্ধু দিবস।

দিবসটি উপলক্ষে এ আয়োজনের মাধ্যমে মুখরিত ছিল রাজধানীর মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল। বন্ধু দিবসে বাইকারদের এমন আন্তরিক আচরণে খুশি ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল্লাহ সদু। তিনি বলেন, ‘আগে রাস্তায় বাইকারদের দেখলেই বিরক্ত লাগত। সুযোগ পেলেই বাইকাররা যেখানে-সেখানে বাইক নিয়ে ঢুকে যেত। তখন মনে হতো রাস্তায় বাইকাররা না থাকলেই ভালো হতো। শান্তিতে গাড়ি চালাতে পারতাম। কিন্তু বন্ধু দিবসে বাইকারদের এমন ব্যবহারে আমি মুগ্ধ।’

ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাবের সদস্য মাহমুদা শিপ্রা বলেন, ‘রাস্তায় বাইক নিয়ে চলতে গেলে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। বন্ধু দিবসে বাসচালক ভাইদের সঙ্গে দেখা করে নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি। আমাদের সমস্যার কথা তাদের বলেছি, একই সঙ্গে তাদের কথাও আমরা শুনেছি। আশা করি, ভবিষ্যতে রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে এ আলোচনা উভয়ের জন্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

মিশফিকা শ্রাবণ নামের আরেক নারী বাইকার বলেন, ‘বাসচালকেরা রাস্তায় বাইকারদের কোন বিষয়ে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত হয়, তা আজ জানতে পেরেছি। বিষয়গুলো জানা থাকার ফলে রাস্তায় সতর্কতার সঙ্গে বাইক চালাতে আমাকে সাহায্য করবে।’

এমন আয়োজনে বাসচালকেরাও ছিলেন উচ্ছ্বসিত। ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘রাস্তায় বাস ও বাইক পাশাপাশি চলে। একে অপরকে সহযোগিতা না করলে রাস্তায় চলাচল করা অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে বড় কোনো দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। আজকের আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক আরও মজবুত হলো।’
ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাবের মিরপুরের অ্যাডমিন এহসানুল হক বলেন, এমন আয়োজনে বাইকার ও বাসচালকদের মধ্যে আরও বেশি হৃদ্যতা তৈরি হবে।

বন্ধু দিবসে ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাব দেশব্যাপী ভিন্নধর্মী এই আয়োজন করে। আয়োজনের অংশ হিসেবে ঢাকা, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, খুলনা, যশোর, চট্টগ্রামসহ দেশের ১২টি জেলায় বাস ও ট্রাকস্ট্যান্ডে চালকদের সঙ্গে সড়ক সচেতনতামূলক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ক্লাবের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সড়ক-সচেতনতামূলক বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করেন।

ইয়ামাহা রাইডারস ক্লাব বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাইকিং কমিউনিটি। ২০১৮ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়, যা এখন পাঁচ হাজারের বেশি বাইকারের পরিবার। গ্রুপটি বাইক রাইড, ট্যুর, গেট টুগেদার, বাইকসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে থাকে। এগুলোর পাশাপাশি দেশের ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সময় ব্যতিক্রমী মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কোভিড মহামারি পরিস্থিতির সময় খাদ্য বিতরণ, শীতে গরিব, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে কম্বল–তাঁবু বিতরণ, সুনামগঞ্জ বন্যা পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণসহ নানা কাজ করেছিল গ্রুপটি।
লেখা: তারিকুর রহমান খান