টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে চলছে ডিবিএল গ্রুপ

প্রবাসীরা বিদেশবিভুঁইয়ে যখন কোনো শপিং মলে পোশাক কিনতে যান, তখন পোশাকের নির্দিষ্ট ট্যাগ দেখে অনেকেরই চোখ ছলছল করে। কারণ, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’—বিশ্বজুড়েই একটি সুপরিচিত ট্যাগ। এটি শুধু একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না, একই সঙ্গে অসংখ্য দেশের আস্থার প্রতীক হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বের পোশাক-চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছেন হাজার হাজার পোশাক কারখানার প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক, যাঁদের অধিকাংশই নারী। তাই বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে তৈরি পোশাক খাতে (আরএমজি) বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে। আর এই অনন্য অর্জনে গর্বিত অংশীদার দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ‘ডিবিএল গ্রুপ’।

১০০–এর কম জনবল এবং মাত্র ৩৭টি সুইং মেশিন নিয়ে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘দুলাল ব্রাদারস লিমিটেড’ বা ডিবিএলের। বর্তমানে পোশাক নির্মাণ, টেক্সটাইল, অ্যাকসেসরিজ, প্যাকেজিং, সিরামিক টাইলস, টেলিকমিউনিকেশন, ড্রেজিং, তথ্যপ্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন (ভিএলএসআই), ফার্মাসিউটিক্যালস, ডিজিটাল সলিউশন সার্ভিসেস, রিটেইল, সুতা উৎপাদনসহ ২৬টি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছে ডিবিএল গ্রুপ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্বের অনেক স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক সরবরাহ করে যাচ্ছে ডিবিএল। যার মধ্যে রয়েছে এইচঅ্যান্ডএম, জর্জ (আস্তা), সিঅ্যান্ডএ, এস্প্রি, হুগো বস, পুমাসহ ইউএস, ইউকে ও ইউরোপের অনেক নামীদামি ব্র্যান্ড।

সময়ানুবর্তিতা ও পণ্যের গুণগত মান রক্ষার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ডিবিএলের নাম। ফলে বড় হতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। বাড়তে থাকে অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। বর্তমানে ৪৪ হাজার ২০০-এর বেশি জনবল নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৭০ মিলিয়ন টার্নওভার ছিল ডিবিএল গ্রুপের। ডিবিএল সিরামিকস, ডিবিএল ফার্মাসিউটিক্যালস, ডিবিএল ডিজিটাল, ইকো থ্রেডস অ্যান্ড ইয়ারনস ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই গ্রুপের রয়েছে নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর লিমিটেড। বিশ্বখ্যাত জার্মান স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড পুমার বাংলাদেশে যাত্রা শুরু হয় ডিবিএলের হাত ধরেই; যেটার বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ মোট চারটি আউটলেট রয়েছে।

সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও রয়েছে ডিবিএল গ্রুপের সম্পৃক্ততা। যার মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর স্বাস্থ্য, সম্পদের সঠিক ব্যবহারের সক্ষমতা তৈরি এবং কমিউনিটির উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। ডিবিএল গ্রুপের লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায়ন, দক্ষতা বিকাশ ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে পণ্য ও পরিষেবার গুণগত মান ঠিক রেখে গ্রাহকের চাহিদা অতিক্রমের যোগ্যতা অর্জন করা।

এ ছাড়া তাদের রয়েছে ন্যায্যমূল্যের দোকান ‘বন্ধন’। যার মাধ্যমে কর্মচারীদের জন্য উৎপাদন খরচে এবং বাকিতে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে। অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান পেতে সাহায্য করে। নারী কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধির চাহিদা পূরণের জন্য রয়েছে নারীস্বাস্থ্য কর্মসূচির উদ্যোগ, শিশুর শিক্ষা সহযোগিতায় রয়েছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ইত্যাদি।

‘মাদারস@ওয়ার্ক’ শীর্ষক উদ্যোগটি কর্মক্ষেত্রে মায়েদের নিশ্চিত করে তাদের শিশুসন্তানদের নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে। নারীর ক্ষমতায়নে আরও জোর দেওয়ার জন্য ডিবিএল আমফোরি এবং সিএসআর সেন্টার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে।
তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ সব সময় নতুন পণ্যের উন্নয়ন এবং সর্বনিম্ন খরচে স্বল্প সময়ে সর্বোত্তম মানের উৎপাদনের প্রক্রিয়াগুলো উন্নত করার কাজ করে। ডিবিএলের রয়েছে নিজস্ব কোয়ালিটি কন্ট্রোল সার্কেল, যা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি এবং তাঁদের ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়ক। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রুপটি এখন নিজস্ব লক্ষ্য নির্ধারণ করছে।

চলতি বছরে ডিবিএল তাদের উন্নয়ন ও রূপান্তরের নতুন যাত্রা শুরু করেছে, যাতে ২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিবিএল যেন একটি তুলনামূলক টেকসই ব্যবসায় পরিণত হতে পারে। ‘ট্রান্সফরমেশন ৪.০’ নামে ট্রান্সফর্মিং এবং ডেভেলপমেন্টের মূল লক্ষ্য রয়েছে প্রশাসনিক, নেতৃত্ব, শক্তি ও পুনর্ব্যবহারের ওপর। ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন দ্বারা ‘পার্টনারশিপ ফর ক্লিনার টেক্সটাইল’–এর মতো প্রোগ্রামগুলোর সঙ্গে এর ডাইং কারখানাগুলোতে পানি এবং অন্যান্য সম্পদের ব্যবহার কমাতে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। ডিবিএল বর্তমানে প্রতি কেজি ফেব্রিক রং করার জন্য মাত্র ৫০ লিটার পানি ব্যবহার করছে। কেয়ার, ডিইজি, আইএফসি, জিআইজেড ও ইউনিসেফের মতো আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে নানামুখী কাজ করছে ডিবিএল।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে ডিবিএল গ্রুপ। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ সেশনের জন্য ডিবিএল অর্জন করেছে ‘সুপারব্র্যান্ড’ অ্যাওয়ার্ড। ‘সুপারব্র্যান্ড’ হলো বিশ্বের ব্র্যান্ডিং–জগতের বৃহত্তম স্বাধীন স্বীকৃতিদাতা প্রতিষ্ঠান। সুপারব্র্যান্ডস বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও মূল্যবান ব্র্যান্ডগুলোকে স্বীকৃতি দেয়, যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের গ্রাহকদের কাছে মানসম্পন্ন পণ্য ও পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে ভোক্তাদের মনে আস্থা তৈরি করে।

এ ছাড়া অন্যান্য পুরস্কার ও স্বীকৃতির মধ্যে ডেইলি স্টার এন্টারপ্রাইজ অব দ্য ইয়ার, দ্য সাসটেইনিবিলিটি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২২, ন্যাশনাল এক্সপোর্ট ট্রফি (তিনবার), এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড (পাঁচবার), আইসিএমএবি বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড (পাঁচবার), আইসিএসবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড (পাঁচবার), এইচএসবিসি বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২০, এইচএসবিসি ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ড, সোশ্যাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড, ওয়ার্ল্ড টেক্সটাইল অ্যাওয়ার্ড, দ্য টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট (ম্যানচেস্টার, ইউকে) সাসটেইনিবিলিটি অ্যাওয়ার্ড, ইউএন গ্লোবাল কমপ্যাক্ট এসডিজি পাইওনিয়ার ২০১৯, গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ এসডিজি পাইওনিয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং এইচঅ্যান্ডএম, জর্জ, পুমা, টম টেইলরের পক্ষ থেকে সাসটেইনিবিলিটি অ্যাওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য।