এবার ৩০ হাজার টন কাসাভা সংগ্রহ করবে প্রাণ

প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রাণের কারখানায় নিয়ে আসা কাসাভা। ছবি: প্রাণের সৌজন্যে
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টন কাসাভা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রাণ। আর কাসাভা চাষের জন্য প্রাণের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে কৃষকেরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

প্রাণের পক্ষ থেকে দেশে কাসাভা চাষের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই ফসল চাষের জন্য প্রায় দুই হাজার কৃষক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। দেশে কাসাভা চাষ হয় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়।

কাসাভা হচ্ছে একধরনের শিকড়জাত আলু, যা সাধারণত পাহাড়ি, অনাবাদি ও অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে চাষ হয়। দেশে এটি শিমুল আলু নামে পরিচিত। কাসাভা থেকে উন্নত মানের স্টার্চ পাওয়া যায়, যা দিয়ে গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, ক্র্যাকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাঁপড়, চিপসসহ নানা খাদ্য তৈরি করা হয়। বস্ত্র ও ওষুধশিল্পে ব্যাপকভাবে কাসাভার স্টার্চ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া কাসাভা সেদ্ধ করে ভর্তা বানিয়ে কিংবা পাউডার করে আটা হিসেবে খাওয়া যায়। পাশাপাশি স্টার্চ দিয়ে অ্যানিমেল ফিড বা পশুখাদ্যও তৈরি করা যায়।

প্রাণ এগ্রো বিজনেসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে প্রাণ কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বা চুক্তির ভিত্তিতে কৃষকদের কাসাভা চাষে উৎসাহ দিয়ে আসছে। এর ফলে বাংলাদেশের অব্যবহৃত পাহাড়ি জমির ব্যবহার বাড়ছে। এ জন্য চাষিদের চাষের প্রশিক্ষণ, আর্থিক প্রণোদনা, কৃষি উপকরণ সহায়তা এবং স্বল্পমূল্যে বীজ দিয়ে সহায়তা করছে প্রাণ।

মাহতাব উদ্দিন আরও জানান, নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত কাসাভা সংগ্রহ ও রোপণ দুটোই একসঙ্গে চলে। কৃষকেরা কাসাভার ফসল তোলার পরপরই আবার বীজ রোপণ করেন। দেশে ক্রমান্বয়ে একরপ্রতি কাসাভার ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় কৃষকেরা এটি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ ছাড়া কন্দাল জাতীয় ফসলের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ কাসাভার উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

প্রাণ এগ্রো বিজনেসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চলতি মৌসুমে প্রাণের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ চাষিরা প্রায় ৫ হাজার ৫০০ একর জমিতে কাসাভা চাষ করেছেন। আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ হাজার টন কাসাভা সংগ্রহ করেছি। গত বছর আমরা একরপ্রতি ৪ টন ফলন পেলেও এবার গড়ে ৬ টন ফলন আশা করছি।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, হবিগঞ্জ শিল্পপার্কে প্রাণের সিলভান অ্যাগ্রিকালচার লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের অধীনে একটি কাসাভা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট রয়েছে। এতে প্রতিবছর প্রায় ৬০ হাজার টন কাসাভা প্রক্রিয়াজাত করা যায়।

কামরুজ্জামান কামাল আরও বলেন, সরকার কন্দাল জাতীয় ফসলের উন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যেন পাহাড়ি, অনাবাদি কিংবা কম উর্বর জমিতে কাসাভা চাষ বৃদ্ধি করা যায়। সরকারের এই উদ্যোগ কাসাভার চাষ সম্প্রসারণেও বড় ভূমিকা রাখছে। তবে এই ফসল নিয়ে পাহাড়ি ও অনুর্বর এলাকার কৃষকদের মাঝে আরও প্রচারণা প্রয়োজন, যাতে বাড়ির আশপাশে যেকোনো অনাবাদি জমিতে এই ফসলের আবাদ বাড়ে।