গৃহঋণ-প্রপার্টি মূল্যায়ন এবং মালিকানা যাচাইয়ের সাতসতেরো  

নগরীতে নিজের একটি অ্যাপার্টমেন্টের স্বপ্ন সবারই থাকে। সেই স্বপ্নের নীড়টি নিজের করতে প্রতিটি মানুষকেই যেতে হয় অজস্র বাধাবিপত্তির মধ্য দিয়ে। কাঙ্ক্ষিত বাড়িটি ক্রয় বা নির্মাণ করতে যেমন প্রয়োজন সময়ের তেমনি প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থের। সারা জীবনের সঞ্চয়ও মাঝেমধ্যে মনে হয় নগণ্য। ঠিক তখনই বেশির ভাগ মানুষের জন্য সমাধানের রাস্তা হয়ে উঠে দাঁড়ায় গৃহঋণ বা হোম লোন।

বাড়ি বা প্রপার্টি নির্মাণ বা ক্রয়ের সময় হোম লোনের আইডিয়াটা বেশ প্রচলিত একটি ব্যাপার। বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের (এনবিএফআই) মাধ্যমে এই সুবিধা ভোগ করা যায়। বিগত কয়েক অর্থবছরে আবাসন খাতে অর্থঋণের চাহিদাটা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্যমতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আবাসন খাতে প্রায় ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার চাহিদা ছিল, যা চলতি অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে চাহিদা বাড়লেও কোনো পরিবর্তন আসেনি হোম লোন অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়ায়। হোম লোন অ্যাপ্রুভের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরই কিছুটা সাবধানী। অনেক রকমের কাগজপত্র চেক করে এবং নিশ্চিত হয়ে তবেই লোন প্রদান করে তারা। এই হোম লোন অনুমোদনের পুরো প্রক্রিয়াটি প্রতিষ্ঠানভেদে আলাদা হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগুলো প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের একই রকম। এর মধ্যেই উল্লেখযোগ্য হলো প্রপার্টি মূল্যায়ন এবং মালিকানা যাচাই। এ দুটো ছাড়া কোনো হোম লোন অ্যাপ্রুভ হয় না বললেই চলে। তাই চলুন দেখে নেওয়া যাক এগুলোর জন্য কী কী ডকুমেন্ট প্রয়োজন।

যেকোনো ধরনের হোম লোনের ক্ষেত্রেই প্রপার্টির মূল্যায়ন এবং মালিকানা যাচাই অন্যতম প্রধান দুটি ধাপ। প্রপার্টি মূল্যায়ন এবং মালিকানা যাচাই শব্দগুলো অনেকের কাছেই ‘প্রপার্টি ভ্যালিডেশন এবং ভ্যালুয়েশন’ নামে অধিক পরিচিত। প্রপার্টি ভ্যালিডেশন বা মালিকানা যাচাই হচ্ছে, বাড়ির দলিলপত্রগুলো যাচাইয়ের মাধ্যমে আপনার মালিকানার দাবি প্রমাণ। এর মাধ্যমে প্রমাণিত যে এই প্রপার্টির মালিক আপনি নিজে। আর প্রপার্টি ভ্যালুয়েশন বা মূল্যায়ন হচ্ছে প্রপার্টির বর্তমান বাজারমূল্য নির্ধারণ করা।

প্রথমেই আসা যাক মালিকানা যাচাইয়ের বিষয়ে। আইনগতভাবে প্রপার্টির মালিকানা যাচাই বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ একটি বিষয়। কিন্তু সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে প্রপার্টি কিনলেও অনেক সময় পড়তে হয় নানা ঝামেলায়। এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন যাতে না হতে হয়, সে কারণেই প্রপার্টির মালিকানা যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মালিকানা যাচাইয়ের জন্য নিম্নোক্ত কাগজগুলোর প্রয়োজন হবে।

মালিকানা দলিল হচ্ছে প্রপার্টির প্রধানতম দলিল। এই দলিলের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আপনাকে যেতে হবে এই দলিল যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অধীনে সেখানে। আর সেখান থেকেই এই প্রপার্টির আসল মালিক সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর, সব বায়া দলিল যাচাই করে নিতে হবে। বায়া দলিল হলো পূর্ববর্তী সব মালিকের মালিকানা দলিল। এই দলিল থেকেই পূর্ববর্তী মালিকদের সম্পর্কে সব তথ্য পাওয়া সম্ভব। তারপর আসবে খতিয়ান। খতিয়ান (রেকর্ড অব রাইটস), স্বত্বলিপি বা পর্চা হলো ভূমি নির্ণয়ের একটি বিশেষ দলিল বা নথি। এই নথির মাধ্যমে কোনো জমির মালিকানা ও দখল সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পাশাপাশি ভূমি উন্নয়ন কর সম্বন্ধেও জানা যায়। তা ছাড়া কোনো প্রপার্টির মালিকানার বৈধতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে মিউটেশন খতিয়ান। মিউটেশন খতিয়ানকে অনেকে ‘নামজারি’ হিসেবেও চেনেন। এটা যাচাই করাও অত্যন্ত জরুরি। জমির বা প্রপার্টি ক্রয়ের পরবর্তী জটিলতা পরিহার করতে চাইলে লেনদেনের আগে যে দুটি সার্টিফিকেট চেক করে নিতে হবে, তা হচ্ছে এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট), এনইসি (নো এনকামব্রেন্স সার্টিফিকেট)। এনকামব্রেন্স শব্দটির অর্থ দায়। হয়তো কোনো প্রপার্টি বা জমির বিপরীতে কোনো দায় আছে কি না তা এসব সার্টিফিকেট থেকে জানা যায়। বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি জমির জন্য একটি বাৎসরিক খাজনা/কর পরিশোধ করতে হয়। সব খাজনার রসিদ হালনাগাদ আছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখতে হয়।

মালিকানা যাচাই করা হলে শুরু হয় প্রপার্টির মূল্যায়নের কার্যক্রম। ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই বাড়ি তৈরি বা জমির ক্রয়মূল্যের শতভাগ টাকা লোন হিসেবে দেয় না। বাড়ি নির্মাণ বা ক্রয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রপার্টি মূল্যের ওপর সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অর্থ অনুমোদন দিয়ে থাকে। হোম লোনের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা নিজের থাকতেই হয়। সহজ ভাষায় বলে, ১ কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে হলে শর্ত সাপেক্ষে ব্যাংক আপনাকে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করতে পারে। বাকি ৩০ লাখ টাকার ব্যবস্থা আপনাকে নিজে থেকেই করতে হবে।

হোম লোনের জন্য আবেদন করা হলে ব্যাংক বা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত কয়েকটি বিষয়ের ওপর লক্ষ করে প্রপার্টির মূল্যায়ন করে থাকে। যেমন, একই ধরনের প্রপার্টি ক্রয় বা নির্মাণে কেমন খরচ হতে পারে, এ বিষয়টি। যাচাই করার কারণ হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা আপনার প্রপার্টি দেখার পর সেটা ক্রয় না–ও করতে পারেন। তাঁরা যদি আপনার প্রপার্টির সামনেই নতুন কোনো প্রপার্টি কাছাকাছি বিক্রয়মূল্যে পেয়ে যান সে ক্ষেত্রে হয়তো আর আপনার প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করবেন না, বরং একটু বেশি অর্থে সে প্রপার্টিতেই বিনিয়োগ করবে যার কি না বাজারদর ভালো। এটা যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য জানা বেশ জরুরি। এরপর ‘আশপাশের প্রপার্টির সঙ্গে মূল্য তুলনা করে দেখা’। কাঙ্ক্ষিত প্রপার্টির আশপাশে একই সাইজের প্রপার্টিগুলোর মূল্য সাধারণত কেমন, সেটা যাচাই–বাছাই করা। প্রপার্টি ভেদে মূল্য একটু ওঠানামা করতে পারে কিন্তু কখনোই তা আকাশচুম্বী ব্যবধানের হবে না। এরপর যে বিষয়টি আসে, তা হচ্ছে এই ‘প্রপার্টির ভবিষ্যৎ দাম কেমন হবে’? এই প্রপার্টিটি ভবিষ্যতে বিক্রি করলে কেমন অর্থ পাওয়া যাবে? ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তা বাড়বে না কমবে, এই সব বিষয় যাচাই–বাছাই করে দেখা। এ ছাড়া প্রপার্টির আয়তন এবং ব্যবহারযোগ্য স্থানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে। এর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু বিষয়ও দেখা হয়ে থাকে যেমন, প্রপার্টি নির্মাণসামগ্রী, নকশা ও কার্যকারিতা ইত্যাদি।

প্রপার্টি মূল্যায়ন এবং মালিকানা যাচাই করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ জন্য পাড়ি দিতে হয় বেশ কয়েকটি ধাপ। এগুলোর যেকোনো একটি যদি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়, হোম লোনের আবেদন বাতিল হতে পারে। তবে রিয়েল এস্টেট সার্ভিস প্রোভাইডার অথবা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে অনেকাংশেই সহজ করা সম্ভব।

হোম লোনের অনুমোদন দেওয়ার আগে প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে যেতে হয় বিভিন্ন প্রকার দাপ্তরিক এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সবকিছু ঠিক থাকলেই কেবল আবেদন মঞ্জুর করা হয়ে থাকে। এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রপার্টি মূল্যায়ন এবং মালিকানা যাচাইয়ের জন্যই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যয় করতে হয় সিংহভাগ সময়; মাঝেমধ্যে সে সময়টা কয়েক মাসে গিয়ে ঠেকে। ফলে হোম লোন অনুমোদন পাওয়ার পুরো বিষয়টাই হয়ে দাঁড়ায় বেশ অনিশ্চিত একটি ব্যাপার।

তবে দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে এ পুরো প্রক্রিয়াটিকে বেশ কিছুটা দ্রুততর করা সম্ভব। যেমন যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো যদি নিজেদের মধ্যে দায়িত্বগুলো ভাগ করে নেয় অর্থাৎ, প্রপার্টি মূল্যায়ন এবং মালিকানা যাচাইয়ের বিষয়টিকে কোনো রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের আওতায় করে নিলে হোম লোন অনুমোদনের মতো জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়াও দ্রুততর ও সহজ হওয়া সম্ভব। এতে করে একই সঙ্গে যেমন সুগম হবে হোম লোন নেওয়ার প্রক্রিয়া, সেই সঙ্গে বাড়বে চাহিদাও। ভিন্নভাবে বললে, হোম লোনের এই প্রক্রিয়াটা জনসাধারণের জন্য যতটা সহজ হবে আবাসন খাতে এর ইতিবাচক প্রভাব ঠিক ততটাই বাড়বে।

সময় যতই এগোচ্ছে, বাড়ছে আবাসন খাতে অর্থঋণের চাহিদা। বাসা-বাড়ি নির্মাণেই হোক বা জমি কেনার লক্ষ্যে, হোম লোনই অধিকাংশ মানুষের অন্যতম ভরসা। কিন্তু এখনো জটিল প্রক্রিয়া এবং সময়সাপেক্ষতার কারণে বিপত্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। তবে রিয়েল এস্টেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনেকাংশ ক্ষেত্রেই হোম লোন নেওয়ার প্রবণতা বাড়ানো এবং প্রক্রিয়া সহজতর করা সম্ভব।

এমনই কিছু প্রচেষ্টার সূচনা করেছে দেশের একমাত্র কমপ্লিট রিয়েল এস্টেট সলিউশন প্রোভাইডার বিপ্রপার্টি। তাদের ওয়েবসাইট থেকেই এখন হোম লোনের প্রাথমিক ধাপ শেষ করা যায়, করা যায় হোম লোনের জন্য আবেদন। এ ছাড়া একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও আছে তারা। ফলে কোনো গ্রাহক চাইলে যাচাই–বাছাই করতে পারছেন এবং একাধিক অপশনের মধ্যে বেছে নিতে পারছেন তার সঙ্গে যায় এমনটি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে বিপ্রপার্টির সাপোর্ট পাওয়া যায়, তা দেখা যাবে এখান থেকে।

অনলাইন ও অফলাইনে দুই জায়গাতেই বিপ্রপার্টি যথেষ্ট সক্রিয়। গত চার বছরে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে প্রায় ২৮ লাখের বেশি প্রপার্টির তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা। এই দুই শহরে ৪০০টিরও বেশি অপারেশনস কর্মী নিয়ে প্রতিটি প্রপার্টির মূল্য এবং আরও জরুরি তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে তারা। এসব সুবিধা থাকার ফলে কেবল বিপ্রপার্টির একজন গ্রাহক মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই প্রপার্টির মূল্যসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সম্ভাব্য ধারণা পেতে পারেন।

বিপ্রপার্টিই বাংলাদেশে প্রথম রিয়েল এস্টেট খাতে বিগ ডেটা প্রযুক্তির ও ভ্যালুয়েশন অ্যালগরিদম ব্যবহার শুরু করেছে, যা গতানুগতিক আবাসন খাতকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। আধুনিক এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কেবল প্রপার্টির মূল্যই নয়, গ্রাহকদের প্রপার্টিসংক্রান্ত চাহিদাগুলোও শনাক্ত করা যাবে।

প্রপার্টি–সংক্রান্ত ভ্যালুয়েশন এবং হোম লোনের সার্ভিস বিপ্রপার্টির সম্পূর্ণ সার্ভিসের একটি অংশমাত্র। এর বাইরেও প্রপার্টি রেন্টাল, বাই, রেল, ইন্টেরিয়র এবং পে-রেন্টের মতো আধুনিক এবং সময়োপযোগী সার্ভিস রয়েছে তাদের। বিজ্ঞপ্তি