সাশ্রয়ী ট্রান্সপ্ল্যান্টারের সাশ্রয়ী ট্রে

ফসলের মাঠে কৃষকের নতুন বন্ধু রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার। সারিবদ্ধভাবে একদল কৃষকের ধানের চারা রোপণের সেই প্রথাগত চিত্রকে পাল্টে দিয়েছে আধুনিক এই কৃষিযন্ত্র। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারে চারা রোপণে চারা থেকে চারা ও লাইন থেকে লাইন ঠিক থাকে, যা ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ব্যবহার করে একজন কৃষক ঘণ্টায় প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কৃষকের খরচ আর সময় দুটোই বাঁচায় চারা রোপণের আধুনিক যন্ত্রটি।

পক্ষান্তরে প্রচলিত পদ্ধতির চারা উৎপাদন একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, এতে সংগ্রহকালে চারার শিকড়ের ক্ষতি হয়, যা ফলনে প্রভাব ফেলে। তা ছাড়া আকস্মিক বন্যায় চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমনকি চারার অভাবে নির্দিষ্ট মৌসুমে ধানের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়।

রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারে ব্যবহার উপযোগী চারা তৈরিতে বিশেষ একধরনের ট্রে ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, যা চারার শিকড় অক্ষত রাখে, তাই চারা থাকে সুস্থ ও সবল। এই ট্রে ব্যবহার করে চারা উৎপাদনের জন্য চাষের জমির প্রয়োজন পড়ে না। বাড়ির আঙিনা, উঠান বা মাচায় চারা উৎপাদন করা যায়। ট্রেতে উৎপাদিত চারা সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়া যায়। তাই বন্যা কিংবা অন্য যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও চারা উৎপাদনে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না।

বর্তমানে দেশেই নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে ট্রে উৎপাদন করছে এসিআই মোটরস লিমিটেড

বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর কৃষি খাত বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল মুঈদ বলেন, ‘এবারের আগাম বন্যায় অনেক আমন বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সরকার থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কৃষকদের ট্রেতে বীজতলা করার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছি।’

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২৫টি জেলার ১০০টি উপজেলায় ৪১ হাজার ৬০০টি ট্রে প্রণোদনা হিসেবে দিয়েছে।

চারা উৎপাদনে দিন দিন বিশেষায়িত এই ট্রের ব্যবহার বাড়ছে। অতীতে বিদেশ থেকে এই ট্রে আমদানি করা হলেও বর্তমানে দেশেই নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে ট্রে উৎপাদন করছে এসিআই মোটরস লিমিটেড।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ফা হ আনসারী জানালেন, তাঁদের উৎপাদিত ট্রে শতভাগ ফ্রেশ পলিপ্রোপিলিন দিয়ে তৈরি হওয়ায় এটি মজবুত, হালকা ও পরিবেশবান্ধব। অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত এই ট্রে দামেও সাশ্রয়ী। আমদানি করা পণ্যের তুলনায় অর্ধেক দামেই মিলবে দেশি এই ট্রে। আর যত্নশীল ব্যবহারে ২-৩ বছর নিশ্চিন্তে এটি ব্যবহার করা যাবে। তিনি বলেন, এই ট্রে ব্যবহারে চারা সারিবদ্ধভাবে থাকে, চারার মূল সুস্থ থাকে এবং কম বয়সী চারা লাগানো হয়, ফলে ফলন বৃদ্ধি পায়।

বীজতলা তৈরিতে ট্রে ব্যবহার করা হয়েছে

ফা হ আনসারীর মতে, নতুন এই প্রযুক্তি কৃষকদের আয় ও ফলন দুটোই বৃদ্ধি করে। এবারের আমন মৌসুমে কৃষকদের অন্তত এক থেকে দেড় মাস সময় বাঁচিয়েছে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ও ট্রে। কারণ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বীজতলাগুলো রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারে ব্যবহারের উপযোগী হয়েছিল। এতে একদিকে যেমন কৃষকের সময় বেঁচেছে, অন্যদিকে যথাসময়ে ধানের সঠিক বৃদ্ধিও নিশ্চিত করেছে।